বাঙালির প্রিয় পর্যটন স্থল হচ্ছে দিপুদা অর্থাৎ দিঘা পুরী ও দার্জিলিং। ছুটির মরসুমে পায়ে চাকা লাগিয়ে হুজুগে পর্যটকদের ঢল নামে এই জায়গাগুলিতে। বছরের প্রায় অধিকাংশ সময়ে এই জায়গাগুলিতে থিক থিক করে পর্যটকদের ভিড়। তবে এই গরমের মরসুমে ছুটি কাটাতে ও নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য দু চোখ মেলে উপভোগ করতে অধিকাংশ পর্যটক বেছে নেয় পাহাড়ের রানী দার্জিলিংকে।
বরফের চাদরে মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা, সুস্বাদু মোমো ও সুগন্ধি চা মূলত এই তিনের টানেই পর্যটকরা ছুটে যায় দার্জিলিং এর বুকে। তবে এই ছকে বাঁধা জিনিসগুলি বাদেও দার্জিলিং এ এমন তিনটি বাংলো রয়েছে যেখানে রাত্রিযাপন না করলে আপনার গোটা ট্রিপটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
আরও পড়ুন: সিউড়ি হাসপাতালে কাজল শেখ! হাতের কাছে পেয়ে সুপারের জনহিতকর আবেদন
দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং এই জায়গাগুলিতে অবস্থিত প্রাচীন তিনটি বাংলোতে গেলে এখনো পাওয়া যায় ব্রিটিশ আমলের ছোঁয়া। সেই জায়গার বহু প্রাচীন চা-বাগান ঘেরা বাংলো এখন উৎসাহী পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য সেরা স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যা হার মানাবে ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরের সৌন্দর্যকেও।
তালিকার প্রথমেই রয়েছে গ্লেনবার্ন টি এস্টেট। এটি পাহাড়ের রানী দার্জিলিং এর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দার্জিলিং শহর থেকে এই এস্টেট বা বাংলোটি পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা। এই অতি পরিচিত বাংলোতে পর্যটকদের আতিথেয়তার কোনও ত্রুটি রাখা হয় না। পর্যটকদের মেলে রাজকীয় অভিজ্ঞতার স্বাদ। তাই থাকা খাওয়ার খরচও তুলনামূলক ভাবে বেশি।
এখানে গোটা দিনটা কাটাতে খরচ পড়ে ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকার মতো। এই টাকার মধ্যেই খাওয়া দাওয়া সহ যাবতীয় পরিষেবা উপভোগ করতে পারবেন আগত অতিথিরা। খরচ একটু বেশি পড়লেও পর্যটকরা এখানে মূলত ছুটে আসেন এই বাংলোর প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে যা ১৮৫৯ সালে গড়ে উঠেছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া এই জায়গায় রিভার ক্যাম্পিং-এর সুযোগও মেলে পর্যটকদের।
দ্বিতীয়তে রয়েছে মকাইবাড়িটি এস্টেট বাংলো। এটি কুয়াশা ঘেরা কার্শিয়াং এর মাঝে অবস্থিত। কার্শিয়াং বাজার থেকে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। দার্জিলিঙের গ্লেনবার্ন টি এস্টেট এর তুলনায় থাকার খরচ এখানে তুলনামূলক কম। খরচ শুরু হচ্ছে ৩,০০০ টাকা থেকে যা পরিষেবা অনুযায়ী ৮,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। থাকা খাওয়া সহ চা টেস্টিং এর বিশেষ অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারবেন। এটি পৃথিবীর প্রথম অর্গানিক চা-বাগান হিসেবে পরিচিত।
তৃতীয়তে রয়েছে ছোটা মংপু বাংলো। এই বাংলোটি মংপু চা-বাগানের পাশেই অবস্থিত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বাংলো বাড়িতে সময় কাটানোর বহু অভিজ্ঞতা আছে। তাই যেন তার ছোঁয়ায় আরও মনোরম হয়ে উঠেছে গোটা বাংলো। এখানে থাকা খাওয়ার খরচ মিলিয়ে পড়বে ২,৫০০ টাকা। যা পরিষেবা অনুযায়ী ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। রবি ঠাকুরের স্মৃতিতে জড়িয়ে থাকা এই বাংলোর সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে আসবে।
প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এই অপূর্ব সুন্দর বাংলোগুলিতে পৌঁছাতে মোটেই ঝক্কি পোহাতে হবে না আপনাকে। আপনি যদি বিমানে যাত্রা করেন তাহলে আপনাকে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সিতে সরাসরি পৌঁছাতে হবে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে যাত্রার জন্য রেলপথ বেছে নিলে আপনাকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ট্যাক্সি বা টয় ট্রেনে দার্জিলিং বা কার্শিয়াং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। সড়কপথেও যাত্রা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। এতে সময় একটু বেশি লাগবে।
ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যে মোড়া এই বাংলোগুলিতে রাত্রি যাপন করতে চাইলে আপনাকে অগ্রিম বুকিং সেরে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে Booking.com, Airbnb, MakeMyTrip অথবা বাংলোদের নিজস্ব ওয়েবসাইট বেছে নিতে পারেন বুকিং এর জন্য। তাহলে আর কি হাতে দুই তিনদিন সময় বের করে বেরিয়ে পড়ুন গরমের ছুটিতে সৌন্দর্যে ঘেরা এই বাংলো বাড়িতে।