Mahashivratri 2025: ভুলেও এই কাজ করবেন না মহাশিবরাত্রিতে, রুষ্ট হবেন মহাদেব

Mahashivratri 2025: চলতি বছরের মহাশিবরাত্রিতে দেখা গেছে ভদ্রার ছায়া। যদি এই বছরের মহাশিবরাত্রি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে একনজরে দেখে নিন এই প্রতিবেদনটি। জানুন কখন এবং কীভাবে ভগবান শিবের পুজো করলে তার ফল পাওয়া যাবে। এবারের মহাশিবরাত্রি ২৬ ফেব্রুয়ারি, শুভ সময় হল সকাল ১১:০৮ টা থেকে রাত ১০:০৫ টা পর্যন্ত, তবে থাকবে ভদ্রার ছায়া। মহাশিবরাত্রির দিনটিকে হিন্দু ধর্মে ‘অত্যন্ত শুভ’ বলে মনে করা হয়। হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, মহাশিবরাত্রি উৎসবের বিশেষ আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে। ভগবান শিব এবং পার্বতীর যথাযথ ভাবে পূজো করলে, মনে করা হয় সমস্ত মনের বাসনা পূরণ হবে।

মহাশিবরাত্রির (Mahashivratri 2025) পুরো দিনটি চলে দেবাদিদেব মহাদেবের পুজো। তবুও যারা বিশেষ শুভ সময় পুজো করে থাকেন তারা বিশেষ ফল পান। যদি কোন ভক্ত মন্দিরে গিয়ে পুজো করতে না পারে তাহলে একেবারেই চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এই বিশেষ দিনে ভক্তি ভরে বাড়িতে শিবলিঙ্গের পুজো করতে পারেন। শিবলিঙ্গকে বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তাহলে জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে। পরিবারে নেমে আসবে সুখ শান্তি। বিশেষ করে এই শুভদিনে চার প্রহরের সময় দুধ, দই, গঙ্গা জল, ঘি এবং বেলপাতা দিয়ে শিবলিঙ্গে অভিষেক করার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। চলুন জেনে নিই মহাশিবরাত্রির চারটি প্রহরের শুভ সময়।

ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে সকাল ১১:০৮ মিনিটে শুরু হবে এবং পরের দিন অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে সকাল ৮:৫৪ মিনিটে শেষ হবে। পূজোর শুভ মুহুর্ত: রাত ১২:০৯ থেকে রাত ১২:৫৯ মিনিট পর্যন্ত। উপবাসের সময় সকাল ০৬:৪৮ থেকে ০৮:৫৪ পর্যন্ত। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর ফাল্গুন কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে মহাশিবরাত্রি (Mahashivratri 2025) পালিত হয়। মহাশিবরাত্রির মাহাত্ম্য হিন্দুধর্মের মানুষের কাছে অন্যতম। ভক্তরা এই দিন উপোস থেকে ভোলেনাথের পূজা করে। বিশেষ এই দিনে জলাভিষেক এবং রুদ্রাভিষেক করা হয়। এই বছর মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে ফাল্গুন কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথি ২৬শে ফেব্রুয়ারি সকাল ১১:০৮ টা থেকে ২৭শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮:৫৪ টা পর্যন্ত।

জ্যোতিষীরা কোন বিশেষ কথা বলেছেন চলতি বছরের শিবরাত্রি সম্পর্কে? তাদের মতে, শুভ ও মাঙ্গলিক কাজকর্মে ভদ্রা অশুভ প্রভাব বিস্তার করে। দেবী-দেবতাদের পুজোয় ভদ্রার কোনও প্রভাব থাকে না। অতএব শিবের পুজোয় ভদ্রা কোনও অশুভ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। সমস্ত নিয়ম মেনে এই দিন শিবের পূজা করুন। বেলপাতা, দুধ, গঙ্গাজল, মধু, ফুল, নারকেল ইত্যাদি অর্পণ করুন। শিবকে পায়েসের ভোগ নিবেদন করতে পারেন। এই তিথিতে শিবের পঞ্চাক্ষরী মন্ত্র ও মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করলে অবশ্যই দেবাদিদেবের আশীর্বাদ লাভ করবেন। চার প্রহরের পুজোর পর পরের দিন সকালে ব্রত ভঙ্গ করা উচিত। মহাশিবরাত্রিতে কখনোই শিবলিঙ্গে তুলসী পাতা নিবেদন করবেন না। এছাড়াও হলুদ, সিঁদূর অর্পণ করবেন না এবং ডাবের জলও অর্পণ করবেন না।

চারটি প্রহরের পূজার সময়

মহাশিবরাত্রি প্রথম প্রহর পূজোর মুহুর্ত: সন্ধ্যা ০৬:২৯ থেকে রাত ০৯:৩৪ পর্যন্ত
দ্বিতীয় প্রহর পূজার সময় – রাত ০৯:৩৪ থেকে রাত ১২:৩৯ পর্যন্ত
রাত্রি তৃতীয় প্রহর পূজার সময় – ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১২:৩৯ থেকে ভোর ৩:৪৫ পর্যন্ত
রাতের চতুর্থ প্রহর পূজার সময় – ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোর ৩:৪৫ থেকে ৬:৫০ পর্যন্ত।

অনেকেই মহাশিবরাত্রির (Mahashivratri 2025) ব্রহ্ম মুহুর্ত বেছে নেয় ভগবানকে জল নিবেদন করার জন্য। ব্রহ্মমুহূর্ত হল ০৫:০৯ টা থেকে ভোর ০৫:৫৯ টা পর্যন্ত। শাস্ত্র অনুসারে, ব্রহ্ম মুহুর্তের সময় ভোর ০৩:৩০ থেকে ০৫:৩০ পর্যন্ত। এই বিশেষ দিনে শিবের উপাসনার জন্য নিশীথ কালের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। শিবপূজার নিশীথ মুহূর্ত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ১২:০৯ টা থেকে মধ্যরাত ১২:৫৯ টা পর্যন্ত। নিশীথ কাল পুজোর মোট সময়কাল ৫০ মিনিট। মহাশিবরাত্রির দিনে, মহাকুম্ভের শেষ স্নানের ‘ব্রহ্ম মুহুর্ত’ ২৬শে ফেব্রুয়ারি ভোর ০৫:০৯ মিনিটে শুরু হবে এবং ভোর ০৫:৫৯ মিনিটে শেষ হবে।

আরও পড়ুন: মহাকুম্ভ মেলার থেকে কত টাকা আয় হলো? যোগী সরকারের তো পৌষমাস

কি কি করতে হবে মহাশিবরাত্রির দিন?

অবশ্যই শিবরাত্রির দিন সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠুন, স্নান করুন, পরিষ্কার পোশাক পরুন এবং ভগবান শিবের পূজো করুন। মহিলারা যদি এই দিনে শিবরাত্রি করেন তাহলে দুধ এবং মধু অর্পণ করে তাদের পরিবারের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করতে পারেন। যারা মহাশিবরাত্রির উপবাস পালন করেন তাদের এই দিনে বিশেষ সংযত থাকতে হবে। আরেকটি কাজ করতে পারেন শিবরাত্রির আগে বাড়িতে নিয়ে আসতে পারেন একটি পারদ শিবলিঙ্গ। বাড়িতে এনে স্থাপন করলে দূর হবে সমস্ত রকমের বাস্তু দোষ। মহাশিবরাত্রির আগে ভগবান শিবের আশীর্বাদ পেতে, আপনি আপনার বাড়িতে কিছু বিশেষ গাছ লাগাতে পারেন। লজ্জাবতী এবং বেলগাছ হল এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ভগবান শিবকে বেলপাতা অর্পণ করবেন কারণ বেলপাতা তার অত্যন্ত প্রিয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও লজ্জাবতী গাছ ঘরে লাগালে ইতিবাচক শক্তিতে ঘর ভরে ওঠে। পাশাপাশি এটি শনি দোষ কাটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, বাড়ির দক্ষিণ দিকে লজ্জাবতী গাছ লাগানো বিশেষ শুভ।

মহাশিবরাত্রির (Mahashivratri 2025) শুভ তিথিতে, যদি ঘরে তামার কলসি কিনে আনতে পারেন তাও শুভ হবে আপনার জন্য। তামার পাত্র ব্যবহার করে শিবলিঙ্গে জল অর্পণ করাও অত্যন্ত শুভ বলে বিবেচিত হয়। মহাশিবরাত্রিতে, সূর্য, বুধ এবং শনি একই সঙ্গে কুম্ভ রাশিতে গোচর করবে। এই বিরল যোগ এর আগে ১৯৬৫ সালে তৈরি হয়েছিল। এই বিরল সংযোগে যদি ভগবানের পুজো করা যায় তাহলে তিনি তুষ্ট হন। শিবরাত্রিতে শুধুমাত্র ভগবান শিবের নয়, পাশাপাশি সূর্য, বুধ এবং শনির বিশেষ পূজা করার জন্য একটি শুভ সময় রয়েছে।

শিবরাত্রি পুজো বিধি-

মহাশিবরাত্রির দিন সকালে স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরুন। এই দিনে কালো বা ধূসর রঙের পোশাক পরবেন না। তারপর মন্দির বা প্রার্থনা কক্ষ পরিষ্কার করুন এবং গঙ্গা জল ছিটিয়ে পবিত্র করুন। শিবলিঙ্গ অভিষেক করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন গঙ্গাজল, দুধ, দই, মধু এবং বিশুদ্ধ জল। এছাড়াও শিবলিঙ্গে অর্পণ করুন ফুল, বেলপত্র এবং ধুতরো। শিবলিঙ্গের কাছে ধূপ ও প্রদীপ জ্বালান। মহাদেবকে চিনির মিছরি, ক্ষীর, মিষ্টি এবং কূল নিবেদন করুন। পাশাপাশি পাঠ করুন শিব চালিসা এবং শিবের মন্ত্র জপ করুন। পরের দিন সূর্যোদয়ের পর মহাশিবরাত্রির (Mahashivratri 2025) উপবাস ভাঙুন।