দুর্গাপুজোর সাথে জড়িয়ে থাকা ১১টি প্রথা, যা অনেকেরই অজানা

নিজস্ব প্রতিবেদন : বাঙালির দুর্গাপুজোর সাথে একাধিক রীতিনীতি ও প্রথা জড়িয়ে আছে। এই রীতিনীতি প্রথাগুলিই বাঙালির চিরকালীন সংস্কার। এই প্রথাগুলি যেমন বাঙালির পুজোর প্রথা বলে পরিচিত, ঠিক তেমনি বাঙালির সঙ্গেও এই সকল প্রথাগুলির অন্তরের যোগ রয়েছে। এক দুর্গাপুজোকে ঘিরেই জড়িয়ে আছে বোধন, সিঁদুরখেলা, বিজয় দশমীর মতো একাধিক প্রথা।

বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর ষষ্ঠী থেকে দশমীর মধ্যে পালিত হ‌ওয়া প্রথাগুলি হল ১) বোধন, ২) কল্পারম্ভ, ৩) আমন্ত্রণ, ৪) অধিবাস, ৫) কলাবউ স্নান, ৬) নবপত্রিকা স্থাপন, ৭) কুমারী পুজো, ৮) সন্ধিপুজো, ৯) সিঁদুর খেলা, ১০) বিসর্জন,
১১) বিজয়া দশমী।

আর মহালয়ার সময় পালিত হয় পিতৃ তর্পণের মতো বংশানুক্রমিক ও চিরাচরিত প্রথা।

ব্রাহ্মণ থেকে শুদ্র সকল জাতির মানুষেরা মহালয়ার পূর্ণ লগ্নে তাদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল ও তিল দান করেন। একেই তর্পণ বলা হয়। এমনটা করলে উত্তর পুরুষরা পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ পান।

এই বছর মল মাস হওয়ার কারণে মহালয়ার একমাস পর পিছিয়ে আজ ২২ অক্টোবর থেকে দুর্গাপুজা শুরু হল। ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে এসে পুজো শেষ।

ষষ্ঠী : ষষ্ঠীর দিন থেকে বোধন, কল্পারম্ভ, আমন্ত্রণ ও অধিবাস রীতিগুলি পালিত হয়। এদিন সমস্ত শাস্ত্রীয় উপাচার মেনে ঘট ও জলপূর্ণ তাম্রপত্র মন্ডপের একপাশে রেখে দেবী দুর্গা ও চন্ডীর পুজো করা হয় প্রথমে। এরপরে দেবীর বোধন হয়।বোধনের আগে দেবীর মুখের থেকে কাগজ সরিয়ে দেবীর মুখ উন্মোচন করা হয়। একে বলা হয় কল্পারম্ভ। বোধন এর মধ্য দিয়ে দেবীকে জাগ্রত করা হয়। এরপর বিল্ব শাখার মধ্যে আমন্ত্রণ করা হয় ও তারপরে হয় অধিবাস।

এই অধিবাসের ক্ষেত্রে একটি গণ্ডি কাটা হয়, লাল সুতো দিয়ে চারটি কঞ্চির মাথা বেঁধে গণ্ডি দেওয়া হয় অধিবাসে। মনে করা হয় সেই গণ্ডির মধ্যে কোন অশুভ শক্তি প্রবেশ করতে পারে না।

সপ্তমী : সপ্তমীর দিন দেবী দুর্গার প্রতীকরূপে নয়টি উদ্ভিদকে স্থাপন করা হয়। এই রীতিকে বলা হয় নবপত্রিকা স্থাপন। এছাড়া এই দিন দেবী দুর্গার অপর প্রতীক কলাবউকে বধূ রূপে সজ্জিতা করে প্রতিষ্ঠা করা হয় মণ্ডপে। নবপত্রিকা স্থাপন ও কলাবউ স্নানের মধ্য দিয়ে দুর্গাপুজোর প্রথাগত সূচনা হয়।

অষ্টমী : অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো হয়। যেসকল বালিকারা এখনো বয়সন্ধি বয়সে পৌঁছয়নি, তাদেরকে দেবীরূপে পুজো করা হয়। ৭ থেকে ৯ বছরের বালিকাদের পুজো করা হয়। মনে করা হয় যে কুমারী পুজো করলে অশেষ পূণ্য ফল লাভ হয়। এছাড়া আর ও মনে করা হয় যে কুমারীদেরকে ভোজন করালে সারা পৃথিবীকে ভোজন করানো হয়।

অষ্টমীর দিন সন্ধিপুজো হয়। দেবী দুর্গা যে সময় চন্ড মুন্ড বধের জন্য চামুণ্ডা রূপ ধারণ করেছিলেন সেই মুহূর্তে সন্ধিপুজো অনুষ্ঠিত হয়।মনে করা হয় এক সন্ধিপুজো করলে সারা বছরের দুর্গা পুজো করার ফল মেলে।

নবমী : নবমীর দিন বলিদান নবমীর হোম ইত্যাদি প্রথা পালিত হয়।

দশমী : দশমীর দিন সকলে দেবী দুর্গার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেবীকে মিষ্টিমুখ করিয়ে বিদায় জানান সকলে। এরপর বিবাহিত রমণীরা একে অন্যের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে সিঁদুর খেলা করেন। এরপর দশমীর দিন দেবী দুর্গার মৃণ্ময়ী মূর্তিকে গঙ্গার জলে বিসর্জন দেওয়া হয় এবং একই সাথে দেবী পরের বছর যাতে আবার এই সময় আসেন তার জন্য আহ্বান করা হয়। এইসময় ভক্তবৃন্দরা দেবীকে বিদায় জানাতে বিভিন্ন রকম নাচ-গান করে থাকেন।

দেবীর বিসর্জনের পর আরও একটি প্রথা পালিত হয় এটিকে বলা হয় বিজয়া দশমী। এক্ষেত্রে সমবয়সী ও বন্ধু স্থানীয়রা একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করেন ছোটরা বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। মিষ্টিমুখ করানো হয় বিজয় দশমী প্রথায়। এই প্রথার মধ্য দিয়েই সকলের মঙ্গল ও কুশল কামনা করা হয়।