করোনার প্রকোপে লোপাট হয়ে গেল গোটা একটা দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদন : কোভিড ১৯ আমাদের অনেক কিছুই এক এক করে কেড়ে নিচ্ছে। কেড়ে নিয়েছে আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের স্কুল-কলেজের জীবন, আর আমাদের অনেক নাগরিককে। তবে এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি কোভিড ১৯ এর প্রকোপে একটা গোটা দেশ লোপাট হয়ে গেল। ৫০ বছর আগে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যপূর্ণ দেশ হাট রিভার কার্যত লোপাট হতে চলেছে কোভিড ১৯ এর জন্য।

অস্ট্রেলিয়ার কৃষিক্ষেত্রে পরিবর্তিত সরকারি নিয়মাবলীর সাথে একমত হতে পারেননি প্রিন্স লিওনার্দ। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন আলাদা একটি দেশ তৈরি করার।অস্ট্রেলিয়ার আইনের ফাঁক ব্যবহার করে ১৯৭০ সালে তিনি নিজের জন্য একটি ক্ষুদ্র দেশ তৈরি করেন। এমনকি জনা তিরিশেক নাগরিকের এই দেশের পক্ষ থেকে ১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া যদিও কোনদিনই হাট রিভারকে আলাদা দেশ বলে মানে নি। তবে অস্ট্রেলিয়ার মানা না মানাকে কোনদিনই পাত্তা দেননি প্রিন্স লিওনার্দ। তার দেশে পর্যটনের জন্য তিনি আলাদা ভিসা করেছেন। এমনকি সেই দেশের রয়েছে আলাদা মুদ্রা ও আলাদা ডাক টিকিট। আর রয়েছে এই দেশের আলাদা পতাকাও। এই দেশের নাগরিকদের প্রশাসন থেকে পাসপোর্ট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সও আলাদা করে জারি করা হয়‌। ক্ষুদ্র এই দেশের আমেরিকা ও ফ্রান্স মিলিয়ে দশটি রাষ্ট্রে তেরোটি জায়গায় রয়েছে নিজেদের দূতাবাস। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থ থেকে ৫০০ কিমি দূরে অবস্থিত এই দেশ। গোটা দেশটাই ৭৫ বর্গকিমি জমির ওপর গড়ে উঠেছে।

দেশের মধ্যে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলিকে বলা হয় ‘মাইক্রোনেশন’। পৃথিবীজুড়ে এরকম বহু মাইক্রোনেশন আছে তবে এই সব মাইক্রোনেশনগুলির মধ্যে একমাত্র ভ্যাটিকান সিটির আন্তর্জাতিক স্তরে সার্বভৌমত্ব আছে। কিন্তু এই সকল মাইক্রোনেশনগুলির মধ্যে হাট রিভার সব চাইতে বিখ্যাত। প্রতি বছর বহু সংখ্যক পর্যটক আসেন এই দেশ ভ্রমণে। স্বাভাবিকভাবেই এই দেশের আয়ের একটি বড় অংশ আসে পর্যটন থেকে। কিন্তু অতি মহামারী কোভিদ ১৯ এর প্রকোপে এই মুহূর্তে পর্যটন পুরো বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই হাট রিভার দেশের আয় সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়েছে। গত বছরই প্রিন্স লিওনার্দ মারা গেছেন। আর ছোট্ট দেশটির ওপর চাপিয়ে গেছেন ২১ লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার কর। আর তারপর এই বছর অতিমারী। এই অবস্থায় রাষ্ট্র চালানোর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে লিওনার্দের উত্তরসূরী প্রিন্স গ্রিম ক্যাসলি হাট রিভারের জমি বেচে ঋণ মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সাথে তিনি অস্ট্রেলিয়ার কাছে নিজের দেশের স্বাধীনতাও সমর্পন করে দিচ্ছেন। এত বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ একটি দেশ তিল তিল করে যা গড়ে উঠেছিল কোভিডের হাতছানি তার সমস্ত ঐতিহ্যকে এক মুহূর্তে বিনষ্ট করে দিল। এরকম একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বর্তমান শাসক প্রিন্স গ্রিম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কিন্তু এছাড়া তাঁর হাতে আর কোন উপায়ও নেই।

দুঃখের সঙ্গে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “৫০ বছর ধরে গড়ে ওঠা বাবার এই কীর্তি বন্ধ করে দেওয়াটা অত্যন্ত দুঃখের।” তাই শেষ হয়ে গেল একটা ঐতিহ্যের, একটা কীর্তির। অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম এই মাইক্রোনেশন নিজেদের সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেললো করোনার থাবায়।