অ্যালার্জি আছে, ভুল করেও নয় চিংড়ি, কাঁকড়া, কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা

শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী: কোনো খাবারের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি এমন এক ভয়ঙ্কর রোগ যে একজন মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে নিঃশেষ করে দিতে পারে। রক্তচাপের পতনের পর সেকেন্ডের মধ্যে রক্তচাপের পতনের ফলে অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে দীঘায়।

বেহালার এক যুবক ঘুরতে গিয়েছিল দীঘায়। যদিও আগে থেকে তার চিংড়ি মাছে অ্যালার্জির কথা জানা ছিল কিন্তু কাঁকড়ার ক্ষেত্রে যে তা এত তীব্রতর রূপ ধারণ করতে পারে তা তার ধারণার মধ্যেই ছিলনা। তবে চিকিৎসকদের মতানুযায়ী, চিংড়ি মাছের ক্ষেত্রে যাদের অ্যালার্জির প্রভাব থাকে তাদের ক্ষেত্রে যেকোনো প্রকার সি ফুডই মারাত্মক ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

মূলত এই ধরনের সামুদ্রিক খাবারের ফলে যেটা হয় শরীরে তা হলো শ্বাসনালীর ওপরের অংশ বন্ধ হয়ে নাকের দুটো ফুটো মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে শ্বাস বন্ধ করে দেয়।

এই বিষয়ে ন্যাশনাল অ্যালার্জি অ্যাজমা ব্রঙ্কাইটিস ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডঃ অলোক গোপাল ঘোষাল জানিয়েছেন, অনেকের ক্ষেত্রে চিংড়ি, কাঁকড়া খাওয়ার পর ঠোঁট ফোলার মতো সামান্য কিছু উপসর্গ প্রাথমিক ভাবে দেখা যায় এক্ষেত্রে অ্যানাফাইলেকটিক শক না হলেও এর থেকে জোরালো সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই রোগীকে প্রথম পর্যায় থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা খুব জরুরী। আল্যার্জি যুক্ত খাওয়ার থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কোন কোন খাবারের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি হতে পারে তা জানার জন্যও ব্যবস্থা রয়েছে, ডাক্তারির পরিভাষায় যাকে বলা হয় এসপিটি বা স্কিন প্রিক টেস্ট। ত্বক রোগ বিশেষজ্ঞরা আবার অন্য কথা বলছেন এ বিষয়ে, তাঁদের মতে ভিন্ন ভিন্ন খাবারের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করানো এককথায় অসম্ভব ব্যাপার। সেক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে আমাদের চলতে হবে। প্রাণীজ প্রোটিনের ক্ষেত্রে অ্যালার্জির আশঙ্কা সবথেকে বেশি, সেকারণে সবার উচিত প্রাণীজ প্রোটিন থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকা।

চিংড়ি, কাঁকড়া, শামুক শরীরের মধ্যে গিয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে যার প্রতিরোধে ‘ইনফ্লেমেটরি মেডিয়েটর’ নিঃসৃত হতে থাকে। হিস্টামিন এমন একটি বস্তু যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে, ফলস্বরূপ শ্বাসনালীর পেশির সংকোচন বৃদ্ধি পেয়ে ব্লাড ভেসেলগুলি ফুলে ওঠে তৎক্ষণাৎ। তারপরেই রক্তের সরবরাহের পরিণাম হার্টের ক্ষেত্রে ক্রমশ কম হতে থাকে। মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও রক্তের প্রবাহ কমে আসার ফলে রোগীকে কোনোভাবেই আর বাঁচানো সম্ভব হয়না। সেক্ষেত্রে কিছু মিনিটের মধ্যেই রোগী অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

তবে এক্ষেত্রে এক প্রতিকারও রয়েছে। এমন একটি ইনজেকশন রয়েছে তা যদি তৎক্ষণাৎ রোগীকে দেওয়া যায় সেইমুহূর্তে ব্লাড ভেসেলগুলি পূর্বের আকারে পুনরায় ফিরে আসে। ফলে রোগীকে বাঁচানো যায় সময়মতো। তাই এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ যেন খাবারের দোকানগুলি এই ধরনের অ্যাড্রিনালিন এপিনেফ্রিন ইনজেকশন নিজেদের সংরক্ষণে রাখে, নয়তো এইভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সেই সঙ্গে সবার আগে রোগীর নিজের সচেতনতা জরুরী।