Kotchatheevu Island: কচ্চাতিবু দ্বীপ কীভাবে চলে গেল শ্রীলঙ্কার হাতে! RTI-এ জানা গেল ৫০ বছর আগের ইতিহাস

India or Sri Lanka who owns Kotchatheevu Island: লোকসভা ভোটের আর কিছুদিন বাকি। তার আগেই বিরোধীপক্ষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর নতুন একটি উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট খুঁজে পেয়েছে বিজেপি সরকার। সম্প্রতি আরটিআই করে জানা যায় ১৯৭৪ সালে কচ্চাতিবু দ্বীপটি (Kotchatheevu Island) শ্রীলংকার হাতে তুলে দেয় তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে ভারতের সামনে তুলে ধরতে চাইছে বর্তমান বিজেপি সরকার। লোকসভা ভোটের কিছুদিন আগেই কংগ্রেসকে দেশের মানুষের সামনে ভারতের অখন্ডতা ভঙ্গকারী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে শাসক দল। এর ফলে ভারত ও শ্রীলংকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যেও অশনি সংকেত দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

স্বাধীনতার আগে শ্রীলংকার নাম ছিল সিলন। ভারতীয় উপকূল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ১.৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কচ্চাতিবু দ্বীপ (Kotchatheevu Island) বর্তমানে শ্রীলংকার দখলে রয়েছে। ১৯২৫ সাল থেকে শ্রীলংকা এই দ্বীপটির উপর নিজেদের অধিকার দাবি করে এসেছে। ভারত কোনদিনই তেমন কোন আপত্তি প্রকাশ করেনি এ বিষয়ে। ১৯৭০ সালে তৎকালীন অ্যাটর্নি এমসি শেতলওয়ার স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, কচ্চাতিবু দ্বীপ শ্রীলংকার অন্তর্ভুক্ত, ভারতের নয়। তৎকালীন বিদেশ সচিব কেবল সিং জানান রামনাথপুর এর রাজা রামনাদের জমিদারি সূত্রে দ্বীপটির উপর অধিকার ছিল। শ্রীলঙ্কা বরাবরই দ্বীপটির উপর দাবি করে এসেছে, কিন্তু তার স্বপক্ষে তাদের কাছে তেমন কোন প্রমাণ নেই। তবে ওলন্দাজ ও ইংরেজদের তৈরি করা মানচিত্র অনুযায়ী দ্বীপটি শ্রীলংকার উত্তরের একটি অংশ হিসাবেই চিহ্নিত রয়েছে। ১৯৭৪ সালের জুন মাসে কচ্চাতিবু দ্বীপটিকে শ্রীলংকার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

রামনাথপুরামের স্বতন্ত্র শাসক কুথন সেতুপতি ১৬২২ থেকে ১৬৩৫ সাল অব্দি ফলক জারি করে কচ্চাতিবু দ্বীপ (Kotchatheevu Island) সহ শ্রীলংকার থালাইমান্নার পর্যন্ত নিজের রাজত্বের কথা বলেন। এই এলাকা থেকে রাজস্বও তুলতেন তিনি। ১৭৬৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় যার ফলে, কচ্চাতিবু দ্বীপটি প্রথমে ওলন্দাজদের হাত হয়ে পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইজারায় আসে। ১৯২১ সালে পরাধীন ভারত থেকে একটি প্রতিনিধি দল সেইলনে যায়। প্রথমে এই দ্বীপটির উপর দখলদারি ছাড়তে রাজি না হলেও পরবর্তীতে দ্বীপটির পশ্চিম অংশে ৩ মাইল দূর থেকে অস্থায়ী জলসীমা নির্ধারণে রাজি হয় দুই দেশ। ১৯৪৭ সালে ভারত এবং ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা স্বাধীন হবার পর আন্তর্জাতিক জলসীমা নির্ধারণের প্রয়োজন উপলব্ধি করে এই সময় তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু বলেন কচ্চাতিবু দ্বীপটির সাথে ভারতের জাতীয় মর্যাদা যুক্ত নেই তাই শ্রীলংকার সাথে এই নিয়ে বিবাদে জড়ানোর কোন মানে হয় না।

আরও পড়ুন 👉 Changed country name: শ্রীলঙ্কা থেকে মায়ানমার, এশিয়ায় এই ৬ দেশের নাম আগে কী ছিল! ৯০% মানুষ জানেন না

সেই থেকে মূলত মৎস্যজীবীদের আনাগোনা চলতে থাকে দ্বীপটিতে। ধীরে ধীরে মাদকচক্রের ঘাঁটি হয়ে ওঠে দ্বীপটি। দুই দেশের মৎস্যজীবীদের বিশ্রাম স্থল এবং সামুদ্রিক ঝঞ্ঝার সময় নিরাপত্তার জন্য একটি গির্জা তৈরি করা হয় সেই দ্বীপে। এখন তেমনভাবে গির্জাটি চালু না থাকলেও প্রতিবছর অন্তত একবার বেশ কিছু মানুষ এই গির্জায় যান। ১৯৬৮ সালে আমেরিকা ও রাশিয়ানদের এই এলাকায় যাতায়াত বাড়তে থাকে এরপরই আন্তর্জাতিক জনসীমা নির্ধারণের প্রয়োজন উপলব্ধি করে বন্ধুত্ব বজায় রাখার খুব সামান্য মূল্য হিসেবে দ্বীপটিকে শ্রীলংকার হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তামিলের মৎস্যজীবীদের এই এলাকায় মাছ ধরতে যাওয়ার অনুমতি ছিল। পরবর্তীতে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের সাথে শত্রুর মতন ব্যবহার শুরু করে শ্রীলংকা। দেখলেই সাথে সাথে গুলি করে দেওয়া অথবা বন্দী করে রাখার মতন বহু ঘটনা ঘটে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের সাথে। ১৯৬৮ সালে গির্জাটিকে কেন্দ্র করে দ্বীপের কিছু অংশ পাকিস্তানের হাতে চলে গেলে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে শ্রীলংকা।তাদের দেশের সংবাদমাধ্যমগুলি “কচ্চাতিবু দ্বীপে শ্রীলংকার রাজত্ব কায়েম হল” উল্লেখ করে খবর বের করেন। তেল পাওয়ার সম্ভাবনা আশা করে চীনের হাতে এলাকাটির ইজারাও দিয়ে দেয় শ্রীলংকা।

শ্রীলংকার গৃহযুদ্ধ থামার পর ২০০৮ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা দাবি করেন, ১৯৭৪ সালে করা চুক্তির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভারতীয় মৎস্যজীবীরা। কিন্তু ভারত চাইলেই এই চুক্তিপত্র তুলে নিতে পারবে না। এখন এই দ্বীপটির উপর ভারত দাবি করতে গেলে শ্রীলংকার সাথে সংঘাত ছাড়া আর কিছুই হবে না। কারণ, এত বছর ধরে চুক্তিপত্র নিয়ে কারো কোন সমস্যা ছিল না। তবে বিষয়টি গুরুতর আকার ধারণ করে ২০২২ সালে তামিলনাড়ুর বন্দী মৎস্যজীবীদেরকে ছাড়ার জন্য শ্রীলংকা অর্থের দাবি করার পর। বর্তমানে ভারত ও শ্রীলংকা দুই দেশই চুক্তিপত্রের নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। তবে দুই দেশই যদি চুক্তিপত্রের নিয়মে পরিবর্তন আনতে চান তবে সেক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে পাঠাতে হবে।