বাবাকে হারিয়ে সাইকেল সেরে বোনেদের নার্সিং পড়ালেন বাঁকুড়ার চায়না

নিজস্ব প্রতিবেদন : নারীই শক্তির প্রতিভূ। এই সংসারে সকল অসাধ্য সে চাইলেই সাধন করতে পারে। অন্যের সুখের জন্য সে নিজের স্বার্থকে ভুলে যেতে পারে। সে সহ্য করে। তার স্বপ্ন ভাঙে তবু সে ভাঙে না। প্রতিকূলতাকে প্রবল তপস্যার দ্বারা অনুকূলে আনতে পারে বাঁকুড়ার মেয়ে এই কথায় প্রমাণ করলো। তার তপস্যা স্বার্থ ত্যাগের, তার তপস্যা পরিশ্রমের। আর তার লড়াই করার অদম্য মানসিকতাই তাকে জীবনের এই কঠিন লড়াই জিতিয়ে দিয়েছে।

বাঁকুড়ার মেয়ে সে, নাম চায়না কর্মকার। বয়স তার বছর সাতাশ। কিন্তু এটাই তার একমাত্র পরিচয় নয় তার কাজই তার পরিচয়। ইনি একজন ‌সাইকেল মেকানিক। তার পরিবারের সদস্য চারজন। সে ছাড়া পরিবারে আছে মা আর দুই বোন। পরিবারের মধ্যে সে হল মেজ বোন। অনেক আগেই বড় দিদির বিয়ে হয়ে গেছে।

চায়না যখন প্রথম বর্ষের ছাত্রী তখনই তার বাবা মারা যান। ভেঙে যাওয়া পরিবারের হাল ফেরাতে, ছোট ছোট বোনদের মুখে হাসি ফেরাতে এই মেজ মেয়েই তখন পরিবারের হাল ধরে।

বাবার ছিলো সাইকেল মেকানিকের দোকান। বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের বাজারে সামান্য সাইকেল সারার দোকান ছিলো বাবার। চায়না আজ এই দোকানেই বসে। গত আট বছর আগে তার বাবা মারা যান। এই দোকানে বসেই চায়না দীর্ঘ আট বছর ধরে পরিশ্রম করে নিজের পরিবারের জন্য, মায়ের জন্য, বোনেদের জন্য। নিজের পড়াশোনার স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে দেয় সে। কিন্তু পূর্ণ করে বাবার স্বপ্ন। তার বাবা চাইতেন মেয়েরা যেন উচ্চশিক্ষিত হয়। সে নিজে পড়া ছেড়ে দিলেও বোনেদের পড়াশোনা ছাড়তে দেয়নি। দুই বোনকে নার্সিং পড়িয়ে যোগ্য করে তুলেছে সে। এক বোনের নার্সিং পড়া শেষ। এক বোন এখন নার্সিং পড়ছে। চায়নার জেদের জোরেই দুই বোন আজ পড়া শেষ করতে পেরেছে।

আজ নারী দিবসের দিন সেলফি তুলে, পোজ দিয়ে নারী দিবসের ছবি পোস্ট করবেন অনেকেই। কিন্তু যথার্থ নারী দিবস তখনই পালন হবে যখন এইরকম শক্তিময়ী নারীদের কথা আমরা জনসমক্ষে আনবো। যখন ভিড় বাসে ট্রেনে সকল নারীরা অস্বস্তি বোধ করবেন না। গভীর রাতে একা থাকার সুযোগ নেবে না কেউ সেইরকম এক নারী দিবস পালনের স্বপ্ন দেখি আমরা। আর চায়নার মতন এই সকল নারীদের লড়াইকে কুর্নিশ জানাই মন থেকে। আমরা ‘banglaxp’-র তরফ থেকে সকলে চায়না কর্মকারের এই জীবনযুদ্ধকে স্যালুট জানাই। তিনি জীবনে আরো এগিয়ে যান এই শুভকামনা জানাই। বিশ্বের সকল মা, বোন, দিদিদের জানাই নারী দিবসের শুভেচ্ছা।