বিক্রম অতীত, মহাশূন্যে যাবে ভারতীয় মহাকাশচারী, লক্ষ্য ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিক্রমের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ইসরোর। বিক্রমকে খোঁজার চেষ্টা করেও আর কোন লাভ নেই। কারণ চাঁদের মাটিতে নেমে এসেছে অন্ধকার। জাঁকিয়ে পড়ছে শীত। রাত চলাকালীন চাঁদে তাপমাত্রা নেমে যায় শূন্যের ২০০ ডিগ্রীর নিচে। এই অবস্থায় বিক্রমে বসানো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যাবে।

কিন্তু এই ব্যর্থতায় ভেঙ্গে পড়েনি ইসরো। চন্দ্রযান-২ এর পর ইসরো এখন মন দিয়েছে গগনযানে। শনিবার ইসরোর ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে এমনটাই জানালেন সংস্থার প্রধান কে শিবন। স্বাধীনতা দিবসের দিন জোড় গলায় ভারত থেকে মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবার সেই লক্ষ্যকেই পাখির চোখ করে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরোর তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা।

গগনযান অভিযানের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এরমধ্যে নভশ্চর নির্বাচনের জন্য বায়ুসেনার ২৫ জন যুদ্ধ বিমান চালককে বাছাই করেছে।

পাইলটদের এক্সারসাইজ টেস্ট, রেডিওলজিক্যাল, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা, ল্যাব পরীক্ষা এবং মানসিক স্থিতি পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রথম দফায় উত্তীর্ণ ১২ জন পাইলটকে আরও কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। দ্বিতীয় দফার বাছাই পর্ব চলবে ৭৫ থেকে ৯০ দিন। ২৫ জনের মধ্য থেকে চূড়ান্ত বাছাইয়ের মাধ্যমে ৩ জনকে আলাদা করা হবে। সেই ৩ জনকে বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসে পাঠানো হবে।

ইসরোর গগনযান প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল মহাকাশে ৩ সদস্যের একটি দল পাঠানো যারা অন্তত ৭ দিন মহাকাশে কাটাবেন। ২০২১ সালের মধ্যে গগনযান মিশনের আগে অন্তত ২ বার মানববিহীন ফ্লাইট মহাকাশে পাঠাবেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায়, সাত দিন পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করতে পারবে এই গগনযান। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এক বার সফল উড়ান হয়েছিল এই যানের। তবে তখন তাতে মানুষ ছিল না। সব ঠিক থাকলে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরেই মানুষ নিয়ে মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার কথা এই গগনযানের।

ইসরোর চেয়ারম্যানের কথায়, “২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা প্রথম হিউম্যান স্পেস বা মানব মহাকাশ বিমানটি পাঠাবো। দ্বিতীয় মহাকাশ বিমানটি যাবে ২০২১  সালে। এই দুই অভিযানের কোনোটিতেই মহাকাশযানে মানুষ থাকবে না।”

মহাকাশ অভিযান ও চর্চায় এগিয়ে থাকা দেশগুলির অন্যতম রাশিয়া। ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার ‘ইন্টারকসমস প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমেই ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন পাইলট রাকেশ শর্মা প্রথম ও এখনও পর্যন্ত একমাত্র ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে গিয়েছিলেন। তাঁকে ও আর এক প্রাক্তন বায়ুসেনা পাইলট রবিশ মালহোত্রাকেও বেশ কয়েক মাস ধরে রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে মহাকাশ যাত্রার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়েছিল রাশিয়ায়।

গগনযান অভিযান সম্পূর্ণ হলে ভারতই হবে বিশ্বের চতুর্থ দেশ, যারা মহাকাশে মানুষ পাঠিয়েছে। এর আগে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন এই সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২১ সালের এই মিশন সফল হলে ভারত মহাকাশে মানুষ পাঠানো দেশগুলির মধ্যে চতুর্থ নম্বরে উঠে আসবে। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন ইতিমধ্যেই এই লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেছে। গগনযানের মিশনের আনুমানিক খরচ ১০ হাজার কোটি টাকা।