করোনা ঠেকাতে অক্লান্ত পরিশ্রম, দেশের কাছে অনুপ্রেরণা ‘কে কে শৈলজা’

নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনার প্রভাবে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। এই ভাইরাসের ফলে রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয়। এর ফলে রোগী বারংবার অজ্ঞান হয়ে যান। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির হার্ট, কিডনি ইত্যাদি অঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যায়। এরপর রোগী মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে। এই ভাইরাস বিভীষিকা হয়ে উঠেছে যেন। চীন থেকে এই ভাইরাসের আক্রমণ প্রথম শুরু হয়। এরপর ক্রমে ক্রমে ভারত, ইরাক, ইরান, আমেরিকা, ইতালিতে এই ভাইরাসের মারণ থাবা পৌঁছে গেছে।

যে সকল মানুষের ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, হার্টের সমস্যা, ক্যান্সার, হাঁপানির মতো রোগ আছে তাদের করোনাভাইরাসে মৃত্যুর আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। আর শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এই রোগ খুব দ্রুত সংক্রমিত হয়।

করোনার এই মারণ থাবা আটকাতে তিনিও লড়ছেন। রাজ্যের করোনা বিষয়ক সব খুঁটিনাটি তাঁর মুখস্থ। নোভেল করোনা ভাইরাসকে আটকাতে তিনি মরিয়া। কে তিনি? কেরলের স্বাস্থ্য মন্ত্রী তিনি। নাম কে কে শৈলজা। তার চোখে ঘুম নেই, সকাল থেকে রাত অবধি তিনি ছুটছেন রাজ্যের নানা জায়গায়। আর মন্ত্রীর দৌড় দেখে ছুটছেন দপ্তরের আধিকারিক থেকে কর্মী সকলেই। লক্ষ্য একটাই করোনা মোকাবিলা।

একদিন সকাল সাতটাতে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিককে ফোন করে তিনি জানতে চান, এখন কেরলে করোনা আক্রান্ত কতজন? দপ্তরের আধিকারিক জানান, ‘বোধ হয় ১২১।’ কে কে শৈলজা সাথে সাথেই ধমক দেন ‘সে কী! আপনি গতকালই তো বললেন ১৫১। সংখ্যাটা কমে গেল কী করে?’ ধমক খেয়ে ততক্ষণে আধিকারিকও ধাতস্থ হয়েছেন। ১৫ মিনিট সময় পান ঐ আধিকারিক রাজ্যে করোনা সংক্রমিতদের সঠিক সংখ্যা জানানোর জন্য। এই ঘটনা থেকেই আমরা বুঝতে পারি তিনি কতখানি ভাবছেন এই বিষয় নিয়ে! ঠান্ডা ঘরে থেকে নির্দেশ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েননি। শৈলজা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬-১৭ ঘণ্টায় এই ভাইরাসের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যস্ত। আক্রান্ত, আতঙ্কিত সকলের কাছে যাচ্ছেন। বাড়িয়ে দিচ্ছেন ভরসার হাত।

শৈলজার এমন রূপ এর আগেও দেখা গেছে। ১৫ বছর আগে কেরলে চিকুনগুনিয়া হয়। তখনও তিনি এইরকমই তৎপর ছিলেন। তবে সেদিন তিনি মন্ত্রী ছিলেন না, ছিলেন বাম সভানেত্রী।

ভারতের মধ্যে কেরলেই প্রথম করোনার প্রভাবের কথা জানা যায়। তবে এখন সংক্রমিতদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। নেই কোনো মৃত্যুর খবরও। এই ঘটনার পিছনে আছেন বাম নেতৃত্বাধীন সরকার সর্বোপরি শৈলজা। ভারত সরকার জরুরি নির্দেশিকাতে বলেই দিয়েছিলেন যে, এই ভাইরাসকে রোধ করতে গেলে আক্রান্ত মানুষজন বা পশু পাখির থেকে দূরে থাকুন। বাইরে থেকে এসেই গরম জলে চোখ মুখ কনুই পা পর্যন্ত ধুয়ে ফেলুন। অ্যালকোহল বেসড সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুয়ে নিন। হাঁচি কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে যত্রতত্র থুতু ও মলমূত্র ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এইগুলি আমাদের করণীয়। অযথা আতঙ্ক ছড়াতে ও মানা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ভীড় এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। পশ্চিমবঙ্গের সরকার ইতিমধ্যেই স্কুল কলেজ বন্ধ করে দিয়েছেন। বন্ধ করা হয়েছে মেলার মতো উৎসবও। খুব প্রয়োজন না হলে মানুষজনকে বাইরে বেরোতে নিষেধই করা হচ্ছে।