দুর্ঘটনায় পা গেছে বাবার, সংসারের হাল সামলাতে বাসের স্টিয়ারিং হাতে যুবতী

নিজস্ব প্রতিবেদন : বরানগরের মেয়ে সে‌, নাম কল্পনা মন্ডল। বয়স এই সবে কুড়ি পেরিয়েছে। চোখে হাজারও একটা স্বপ্ন ছিলো অনেক লেখাপড়া করবে, চাকরি করবে। কিন্তু সে সবই ছাড়তে হলো তাকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই। সংসারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি তার বাবা। এই বাবা যখন দু’বছর আগে দুর্ঘটনার জেরে পায়ে চোট পেলেন তখন এই একরত্তি মেয়েই ধরতে এলো সংসারের হাল।

যে বয়সে মেয়েরা সাজগোজ আর সোন্দর্য নিয়েই মত্ত। সেই বয়সেই কল্পনা বাসের স্টিয়ারিং ধরেছে। হ্যাঁ, বাস চালক সে। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম নয়। বাবা, মা ছাড়াও আছেন দুজন দাদা ও দিদি, তারপরে সে। ভাই-বোনদের মধ্যে সবচাইতে ছোট। যদিও পরিবারের হাল সেই ধরলো অবশেষে।

সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙ্গার পর সে মাকে সাহায্য করে বাড়ির কাজে আর তারপর বাস নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। শুরুর দিকে অনেকেই ভেবেছিলেন সে একাজ পারবে না, পরিবার পাশে ছিলো শুধু। আর আজ প্রতিদিন অসংখ্যবার সে এসপ্ল্যানেড- বরানগর রুটে সফর সেরে বাড়ি ফিরে আসে।

এমনকি প্রথমদিকে সে বাসও পাচ্ছিলো না। বাস পেতে প্রবল সমস্যা ও সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। বাস মালিকদের অধিকাংশই বাস দিতে চান নি, তাকে ফিরিয়ে দেন খালি হাতেই। যদিও শেষে বাস পান কল্পনা। এই লড়াইয়ে বাবা পাশে ছিলেন তার। বাবা সুভাষ বাবু জানান, ছোটো এই মেয়েই তার গর্ব।

বাস চালানোর কথাটি হঠাৎ কীভাবে মাথায় এলো কল্পনার? উত্তর দিলেন বাবা সুভাষ বাবু। তিনি বলেন, তিনি একসময় চকলেট কারখানায় কাজ করলেও আর্থিক অনটনের জন্য বন্ধুর সহযোগিতায় বাস চালাতেন। তখন থেকে বাবার সাথে থেকেই মাঝে মধ্যে গোটা বিষয়টি মন দিয়ে দেখতেন কল্পনা। তবে এই বিষয়টি যে কোনোদিন এইভাবে কাজে লাগবে তা ভাবতেও পারেননি তিনি বা পরিবারের অন্য সদস্যরা।

একজন নারী সে আজ সব পারে। এই ধারণাটি যে কত সত্য তা আবারও প্রমাণ করলো কল্পনা। গত আট মাসে বাস চালক হিসেবে নিজের দক্ষতা প্রমান করেছেন তিনি। তাই এখন সকলেই তার প্রশংসা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কল্পনার বাস চালক অবস্থায় একটি ছবি মারাত্মক রকম ভাইরাল হয়ে যায়। সে এখন অনেক মেয়েরই মনের মধ্যে নিঃশব্দে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে চলেছে।