কথায় বলে মানুষের মধ্যে ইচ্ছাশক্তি সে দুনিয়ার যেকোনো কাজ করতে পারে। তবে শুধু ইচ্ছাশক্তি নয় তার সঙ্গে দরকার কঠোর পরিশ্রম। আর এই দুই ছিল বলেই তো এত বড় অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন রুক্মিণী। এ যেন গল্প হলেও সত্যি! ভাবছেন কে এই রুক্মিণী? কী বা তার পরিচয়?এই আদিবাসী মহিলার কোম্পানির সিইও হয়ে ওঠার কাহিনী জানতে গেলে পড়তে হবে পুরো প্রতিবেদনটি।
দুঙ্গারপুর জেলার মাদোয়া খাপড়দা নামের ছোট্ট একটি গ্রামের বাসিন্দা রুক্মিণী কাটারা। কর্মজীবনের প্রথম দিকে নরেগাতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেসময় খুব সামান্য মজুরিতে সংসারের হাল টানতেন তিনি। তবে একদিন শ্রমিক হিসেবে নরেগাতে কাজ করার সময়, রাজীবিকা নামে এক সংস্থার খোঁজ পান তিনি। ব্যাস ওই সময় থেকেই ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা। তারপর তিনি নরেগাতে শ্রমিকের কাজ ছেড়ে দিয়ে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে কাজ শুরু করেন এবং নিজ হাতে সৌর বাল্ব প্রস্তুত করতে শেখেন।
আরও পড়ুন: ৬০ বছর বয়সে দিলীপ দার বিয়ে! চুপ থাকতে পারলেন না অনুব্রত
নিজের মনবল ও একাগ্রতার জোরে সৌর প্যানেল তৈরি, তা স্থাপন করার মতো এই সকল কঠিন কাজে দিনে দিনে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন রুক্মিণী।রাজীবিকা নামক সংস্থাতে অনেকটা কাজ রপ্ত করার পর তিনি দুর্গা সোলার কোম্পানিতে সুপারভাইজার পদে নিযুক্ত হন। এরপর সময়ের পরিবর্তনের সাথে রুক্মিনীরই কাজ ও দক্ষতা সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে শুরু করে। তার কাজের ক্ষেত্রে এরপর তিনি সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যান। দীর্ঘ পরিশ্রমের পর তিনি কোম্পানির সিইও পদের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেন।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই মহিলা শুধুমাত্র কোম্পানিটির দায়িত্বভারই সামলান না বরং গোটা উপজাতি অঞ্চলের মহিলাদের জন্য স্বনির্ভরতার পথকে আরও প্রশস্ত করেছেন যা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সমগ্র দেশজুড়ে দুর্গা সোলার কোম্পানি, ডুঙ্গারপুর রিনিউয়েবল এনার্জি টেকনোলজি প্রাইভেট লিমিটেড, একটি সৌরশক্তি কোম্পানি হিসেবে সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছে। আর এই কোম্পানিটির সিইও পদই সামলান রুক্মিণী কাটারা।
এই সংস্থা মূলত সেনাবাহিনী সৌর প্যানেল, বাল্ব এবং বিভিন্ন ডিভাইস তৈরি করে থাকে। বর্তমানে ৫০ জন মহিলা স্বনির্ভরতার স্বাদ পেয়েছেন তার সংস্থার হাত ধরেই। তিনি এই ৫০ জন মহিলার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করে চলেছেন। বিগত পাঁচ বছরে এই সংস্থা ৩.৫ কোটি টাকারও বেশি টার্নওভার লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। একজন আদিবাসী পিছিয়ে পড়া পরিবারের মেয়ে হয়েও রুক্মিণী আজ সকলের চোখে যেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
বর্তমানে রুক্মিণীর পরিবারও আর্থিক দিক থেকে যথেষ্ট সচ্ছল। তার সংসার স্বামী কমলেশ এবং চার সন্তানকে নিয়েই আবৃত। শুধুমাত্র সংস্থা পরিচালনার দায়িত্বই তিনি সামলান না বরং রুক্মিণী হাজার হাজার মেয়ের কাছে এক বিরাট অনুপ্রেরণার নাম। বিশেষত উপজাতি মহিলাদের জন্য। তার তরফে জানা গিয়েছে, “আমি মাত্র নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। কিন্তু আজ আমি একটি কোম্পানির মালিক। তাহলে অন্য মহিলারা কেন এটা করতে পারবে না?”
তার এই কথা যেন সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস ও শক্তি জোগায়।
২০১৬ সালে, দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে সম্মানিত হন রুক্মিণী কাটারা। ওই অনুষ্ঠানে হাসিমুখে তার মুখ থেকে একটি বাক্যই শোনা গিয়েছিল- “নারীদের কখনই নিজেদের থামানো উচিত নয়। কম শিক্ষিত হয়েও তুমি বড় হতে পার। শুধু থাকতে হবে ইচ্ছে।”