আজকাল বাজার করার ক্ষেত্রে অনেকেই সুপারমার্কেট বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের উপর নির্ভর করছেন। ব্যস্ত জীবনে হাটে-বাজারে গিয়ে দর কষাকষির সময় নেই বললেই চলে। তাই কাঁচা সবজি থেকে শুরু করে প্যাকেটজাত ডাল, মশলা, বিস্কুট, চিপস কিংবা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যপানীয় সবই কিনে নেওয়া হচ্ছে মোড়কের গায়ের নাম আর দামের ভিত্তিতে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এইসব খাদ্যসামগ্রী স্বাস্থ্যকর কি না, তা কি আমরা যাচাই করি?
বেশির ভাগ প্যাকেটজাত খাদ্যে থাকে নানা ধরনের সংরক্ষণকারী রাসায়নিক (প্রিজ়ারভেটিভ), যেগুলি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরনের খাবার খেলে শরীরে নানাবিধ রোগের আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন, কোন উপাদানটি ভালো, আর কোনটি বিপজ্জনক? কোন পণ্যতে প্রিজ়ারভেটিভ মেশানো আছে, সেটাও বোঝা কঠিন। তাই কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক দেখে নেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: সিউড়িতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নয়া মোড়! তৃণমূল নেতার সিকিউরিটি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দলেরই নেতা
উপাদানের তালিকা খুঁটিয়ে দেখুন
যদি প্যাকেটে চিনি, ময়দা বা হাইড্রোজেনেটেড তেল প্রথমে তালিকাভুক্ত থাকে, তাহলে সেটি কেনা এড়িয়ে চলাই ভালো। চিপস বা ভাজা জাতীয় খাবারে পাম তেল ব্যবহার করা হয় অনেক সময়, সেটিও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। উপাদানে পাম অয়েল উল্লেখ থাকলে সেই পণ্য না কেনাই ভালো।
সার্ভিং সাইজ বুঝে নিন
খাদ্যের ক্যালোরির হিসাব বোঝার জন্য “সার্ভিং সাইজ” দেখে নিন। ধরুন, একটি বিস্কুটের মোড়কে লেখা আছে “প্রতি সার্ভিংয়ে ৫০ ক্যালোরি”, তাহলে বুঝতে হবে, প্রতিটি বিস্কুটে ক্যালোরি অনেকটা বেশি। অনেক সময় মোড়কে “লো ফ্যাট”, “অর্গ্যানিক”, “ন্যাচারাল” ইত্যাদি শব্দ লেখা থাকে, কিন্তু তার মানেই স্বাস্থ্যকর নয়। উপকরণ তালিকায় ডেক্সট্রোজ়, মল্টোজ়, ফ্রুক্টোজ় থাকলে ধরে নিতে হবে এতে শর্করার পরিমাণ বেশি।
‘নো সুগার অ্যাডেড’ সত্যিই কি চিনি নেই?
প্যাকেটের গায়ে ‘চিনি যোগ করা হয়নি’ লেখা থাকলেও, তাতে স্টেভিয়ার মতো বিকল্প মিষ্টি উপাদান থাকতে পারে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তাও ক্ষতিকর হতে পারে।
আইএনএস নম্বর বুঝে নিন
খাদ্যের প্যাকেটের গায়ে “আইএনএস” (International Numbering System) বা ইউরোপীয় “E” কোড দেওয়া থাকে। এটি দেখে বোঝা যায় কোন রাসায়নিকটি ব্যবহার করা হয়েছে।
INS 211: সোডিয়াম বেঞ্জোয়েট স্থূলতা বাড়াতে পারে, শিশুদের জন্য বিপজ্জনক।
INS 250: সোডিয়াম নাইট্রাইট স্নায়বিক সমস্যা ও ক্যানসারের ঝুঁকি।
INS 220: সালফার ডাই-অক্সাইড শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের রোগ এবং অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
INS 102: কৃত্রিম রং লিভার, কিডনি সমস্যা, অ্যালার্জির আশঙ্কা থাকে।
INS 471, 433, 466: মূলত ফ্রোজেন ডেজ়ার্টে ব্যবহৃত হার্টের ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত।
প্যাকেটের বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে নয়, বরং তার গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ে তবেই খাবার বেছে নিন। স্বাস্থ্যই শেষ পর্যন্ত আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ।