প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অধরা সরকারি সাহায্য, উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে শহীদ জওয়ানের পরিবারের

হিমাদ্রি মন্ডল : চার মাসের গর্ভবতী অবস্থায় স্বামীকে শহীদ হতে দেখেছিলেন ইতি সূত্রধর। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই পিতৃহারা হয়ে পড়ে। আর সেই ঘটনা দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে ৬ বছর। সন্তান আজ অনেকটাই বড়, আর সেই সন্তান এখন বাবাকে দেখেন কেবলমাত্র ছবিতেই।

ঘটনা ২০১৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর। CRPF-এর ২৬০ কোবরা ব্যাটেলিয়নের জাওয়ানরা ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা থানার অন্তর্গত একটি জায়গায় মাওবাদী নিকেশে যান। কিন্তু মাওবাদীদের অতর্কিত হানায় শহীদ হন ওই ব্যাটেলিয়নের সিআরপিএফ জাওয়ান বিকাশ সুত্রধর। বিকাশ সূত্রধরের বাড়ি বীরভূমের সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের বনশঙ্কা গ্রামে। ওই জওয়ানের শহীদ হওয়ার সময় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সাহায্য এবং চাকরি দেওয়ার কথা বলা হলেও সেই আর্থিক সাহায্য ও চাকরি আজও অধরা। আর রাজ্য সরকারের থেকে সাহায্য না পেয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে ওই শহীদ জওয়ানের পরিবারের। চারজনের পরিবারের সমস্ত খরচ চলছে কেবলমাত্র পেনশনের টাকায় নির্ভর করে।

শহীদ সেনা জওয়ানের স্ত্রী ইতি সূত্রধরের দাবি, শহীদ হওয়ার পর রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল দু’লক্ষ টাকা এবং একটি হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু দাবি মত দু’লক্ষ টাকা এখনো পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে সেসময় তিনি গর্ভবতী থাকার কারণে হোমগার্ডের চাকরিটাও করতে পারেননি। পরবর্তী ক্ষেত্রে বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনো লাভ হয়নি। এমনকি ইতি সূত্রধর মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন বলেও জানান। তবে তাতেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ওই শহীদ জাওয়ানের স্ত্রী।

তিনি আরও জানান, বাড়িতে রয়েছেন দুই জন বয়স্ক শ্বশুর-শ্বাশুড়ি। তার স্বামীর পেনশনের টাকায় কোনরকমে চলছে সংসার। শ্বশুর কাঠের কাজ করতেন আগে। বয়স হওয়ার কারণে এখন আর কাজ করতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবেই খুবই কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে। ওই পেনশনের টাকা থেকেই শ্বশুর শ্বাশুড়ির চিকিৎসার খরচ ও ছেলের পড়াশুনা এবং সংসার চালাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এমত অবস্থায় রাজ্য সরকার যদি তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী কোন একটা চাকরি তাঁকে দেন তাহলে উপকৃত হবেন বলে জানান ইতি সূত্রধর।

আর চোখের জলে শহীদ ওই জাওয়ানের স্ত্রী দাবি করেছেন, “যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এখনতো আর সে সব কিছুকে ফিরে পাওয়া যাবে। তবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে শহীদ জাওয়ানের স্মৃতিতে যদি কোন স্ট্যাচু অথবা কোন কিছুর নামকরণ করা হয় তাহলে শহীদ জওয়ান এবং তাঁর পরবারের সদস্যরা কিছুটা হলেও শান্তি পায়। আমরা এর আগে এই দাবিটা করেছিলাম কিন্তু সেই দাবি পূরণ করা হয়নি।”