সাধারণত মিড ডে মিলে ভাত, ডাল, তরকারি পরিবেশন করা হয় স্কুলের শিশুদের। আবার সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে ডিম ও মাসে একবার করে মুরগির মাংস দেওয়া হয় শিশুদের পুষ্টির কথা মাথায় রেখে। তবে এবার স্কুলের শিশুদের পাতে রকমারি পদ সাজিয়ে তাক লাগিয়ে দিল রাজনগরের স্কুল। মিড ডে মিলের এই আয়োজন যেন বিয়েবাড়ির মেনুকেও হার মানাবে। প্রতিদিনের ভাত ডাল নয়, শিশুদের পাতে পরিবেশন করা হল পোস্তবড়া, আলুভাজা, সয়াবিনের কাটলেট, দই, চাটনি, মিষ্টি, পাঁপড়, আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয়। মনপ্রাণ ভরে তৃপ্তি করে সমস্ত কিছু খাবার খেল স্কুলের পড়ুয়ারা।
আসলে, মিড ডে মিলের মেনু নিয়ে এক প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় বীরভূমের রাজনগর চক্রের ২১টি স্কুলকে মিলিয়ে। মোট ২৪ রকমের খাবারের পদ আয়োজন করে প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছে রাজনগরের খাসবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়।উল্লেখ্য প্রতিবছর অ্যাডিশনাল নিউট্রিশন ফান্ডের টাকা প্রদান করা স্কুলগুলিকে। এবার সেই টাকা প্রদানের আগেই রাজনগর ব্লকের বিডিও ও ব্লক অফিসের মিড ডে মিল সেকশনের আধিকারিকরা একত্রে মিলিত হয়ে আলোচনা করে মিড ডে মিল প্রতিযোগিতার প্রস্তাব রাখেন।
আরও পড়ুন: জেলা নেতৃত্বের উপর বিরাট অভিমান কাজল শেখের, জানিয়ে দিলেন নিজের সিদ্ধান্ত
একটি নোটিস জারি করে জানানো হয়, ১০০ এর বেশি ছাত্রছাত্রী উপস্থিত রয়েছে যেসব স্কুলে তারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে। ব্যাস তারপরেই জোরকদমে সকলে হাত লাগায় মিড ডে মিলের বিশেষ মেনু তৈরির কাজে। মূলত বীরভূমের রাজনগর চক্রের ২১টি প্রাথমিক স্কুল অংশ নিয়েছিল এই নতুনত্ব প্রতিযোগিতায়। যদিও এক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের উৎসাহকে সাধুবাদ জানানোর মতো কারণ শুধু ফান্ডের টাকা নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেরাও এই বড় আয়োজনের জন্য টাকা দিয়েছেন। সরকারি আধিকারিকদের তরফে ওই স্কুলগুলিতে ঘুরে সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় দেখা হয়েছে।
খাসবাজার প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক কুদরত আলি খানের তরফে জানা গিয়েছে, ‘বিডিও স্যরের তরফে এই প্রতিযোগিতার প্রস্তাব এসেছিল। এরপর সমস্ত পরিকল্পনা মাফিক শিশুদের পুষ্টির এবং স্বাদ দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এই পদগুলির আয়োজন করা হয়। দুপুরে একটু ভিন্ন স্বাদের রকমারি খাবার পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি প্রকাশ করেছে পড়ুয়ারা। তাদের পাতে নানা রকম খাবার পরিবেশন করতে পেরে আমরাও খুশি। পরবর্তীতে প্রতিমাসে অন্তত একদিন এমন রকমারি খাবারের আয়োজন করার পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করব। আশা রাখি, অভিভাবকরা আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।’
মিড ডে মিলে এমন এলাহী আয়োজন দেখে স্বাভাবিকভাবেই কচিকাচারা বুঝে উঠতে পারছিল না আগে কোনটা খাবে। কেউ একটু কাটলেট খেয়েই মুখে মিষ্টি পুরে দিল, কোনও পড়ুয়া আবার আলুভাজা আর আইসক্রিম একসঙ্গে মুখে পুরে দিল। পড়ুয়া স্বপন দাস, মালতী মণ্ডলদের তরফে জানা গিয়েছে, ‘স্কুলে এসে যেন বিয়েবাড়ির ভোজ খেলাম। খুবই আনন্দ হচ্ছে।’ রাজনগরের ব্লক আধিকারিক শুভাশিস চক্রবর্তীর তরফে জানানো হয়েছে, ‘ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টি বিকাশের লক্ষ্যেই এরকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এটাই চাওয়া যে, ভবিষ্যতে অন্য স্কুলগুলিও যেন এগিয়ে আসে।’