Women without clothes: বহুযুগ ধরেই গ্রামবাংলায় নানান রীতিনীতি প্রচলিত রয়েছে। গ্রামের একাংশের মতে সেইসব রীতিনীতি না মানলে সংসারে অকল্যাণ হয়। তাই আজও অনেক গ্রামে সেইসব রীতিনীতির পুজো করেন গ্রামের মানুষেরা। শহরে আবার এইসব দেখা যায় না। তেমনই এক গ্রামের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যেখানকার নিয়ম নীতি শুনলে অবাক হবেন আপনিও।
হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত এই গ্রামটির নাম পিন্নি গ্রাম। ছোট্ট এই নামটা যতটা সুন্দর ঠিক ততটাই সুন্দর এই গ্রামটি। গোটা গ্রামের সৌন্দর্য একবারে মনমুগ্ধকর। এই গ্রামের অনন্য ভারতীয় আচার-অনুষ্ঠানও তাক লাগিয়ে দিতে বাধ্য। শুনলে চমকে যাবেন, শ্রাবণ মাসে পাঁচ দিন এই গ্রামের মহিলাদের পোশাক পড়েন না। আর এটি তাদের ঐতিহ্য। ভারতের সামাজিক রীতিনীতিকে মান্যতা দিয়ে এই ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে ও এই আধুনিক ভারতে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার হচ্ছে ঘরে ঘরে সেখানে দাঁড়িয়ে এখনও বহু মানুষ এটি মেনে চলেন।
আরও পড়ুন: Fake medicine QR: উচ্চ রক্তচাপের ওষুধে QR কোড স্ক্যান বাধ্যতামূলক, নির্দেশ স্বাস্থ্যদপ্তরের
কিন্তু জানেন কি ঠিক কি কারণে এই নিয়ম নীতি অনুসরণ করার প্রচলন রয়েছে এই পিন্নি গ্রামে?
পিন্নি গ্রামে শ্রাবণ মাসে মহিলাদের পোশাক না পড়ার নিয়ম রয়েছে। নিত্যদিনের পোশাকের বদলে এই সময় তারা বেছে নেয় পশমের তৈরি কাপড়। ঐতিহ্য পালন করতে এই কাপড় দিয়ে তাদের শরীর ঢেকে রাখেন মহিলারা। এই ঐতিহ্য গ্রামের মহিলাদের কাছে খুব পবিত্র। একটি প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে তাদের মধ্যে যে যদি কোনও মহিলা এই ঐতিহ্য অনুসরণ না করেন তাহলে ওই মহিলার পরিবারে অঘটন ঘটার আশঙ্কা থাকে। তাই পরিবারের নিরাপত্তার খাতিরে আজও বেশিরভাগ মহিলা এই রীতি অনুসরণ করে চলেছেন। কেউ ভালোবেসে কেউ বা বাধ্য হয়ে।
যেকোনো ঐতিহ্য বা নিয়ম নীতির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু কারণ বা গল্প লেখা থাকে। এই ঐতিহ্য এর পিছনেও এক গল্প রয়েছে।
একটি গল্প অনুসারে জানা যায়, প্রাচীনকালে এই গ্রামটি একটি রাক্ষস বাস করত। যার আতঙ্কে আতঙ্কিত ছিল গোটা গ্রাম। কথিত আছে এই রাক্ষসটি সুন্দর পোশাক পরা মহিলাদের তুলে নিয়ে যেত। এতে ভীত হয়ে গ্রামবাসীরা ইশ্বরের নিকট প্রার্থনা শুরু করেন। ইশ্বর ওই রাক্ষসকে বধ করেন ও গ্রামটিকে তার আতঙ্ক থেকে মুক্তও করেন। সেই সময় থেকে এই ঐতিহ্য চলে আসছে যে শ্রাবণ মাসে মহিলারা পাঁচ দিন পোশাক পরবেন না। আবার বলা হয় যে এই ঐতিহ্য প্রকৃতির সঙ্গে ঐক্য সম্পর্কিত। শ্রাবণ মাসে এই পাঁচটি দিনে মহিলারা প্রকৃতির সঙ্গে জীবনযাপন করেন।
তবে আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যদিও এই ঐতিহ্যের কিছু বদল হয়েছে। এখন সব মহিলারা পোশাক পুরোপুরি ত্যাগ করার বদলে পাতলা পোশাক পরিধান করেন। যে মহিলারা এই ঐতিহ্য অনুসরণ করেন তারা এই পাঁচ দিন ঘরের বাইরে পা রাখেন না। এই পাঁচদিন স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সঙ্গে দেখা করেন না বা কথাও বলেন না। এটিও এই নিয়মের মধ্যেই পড়ে।
শুধু গ্রামের মহিলারা নয়, পুরুষদের জন্যও বিশেষ নিয়ম বাঁধা আছে। যা তারা মেনে চলেন। এই সময়কালে আমিস খেতে পারবেন না এমনকি মদও খাওয়া নিষিদ্ধ। গ্রামের লোকেরা ঐতিহ্যকে পবিত্র উৎসব রূপে পালন করেন তাই এই পাঁচ দিন বাইরের কোনও ব্যক্তির গ্রামে প্রবেশ নিষিদ্ধ। গ্রামের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই নিয়ম নীতি আরোপ করা হয়েছে গ্রামবাসীদের তরফে।