৪০০০ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে বিপন্ন নিজের জীবন! অর্থাভাবে ব্যাহত পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা’র চিকিত্‍সা

নিজস্ব প্রতিবেদন : ইনিই সেই পদ্মশ্রী প্রাপ্ত জলপাইগুড়ির মালবাজার এলাকার ধলাবাড়ি গ্রামের ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা’ করিমুল হক। যাঁর একদিন মাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জোটেনি অ্যাম্বুলেন্স, অ্যাম্বুলেন্স তো দূরের কথা জোটেনি কোনো গাড়িও, শত চেষ্টা সত্ত্বেও সেদিন তিনি বাঁচাতে পারেননি নিজের মাকে। ছটফট করতে করতে নিজের চোখের সামনে মাকে মরতে দেখে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন, গাড়ির অভাবে কাউকে হাসপাতলে পৌঁছাতে না পেরে মরতে দেবেন না। কিন্তু তাঁর কাছে ছিল না কোন অ্যাম্বুলেন্স, ছিল না কোন গাড়ি, তাতে কি হয়েছে! নিজের কাছে থাকা মোটরবাইকেই অবলম্বন করে শুরু করলেন অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা প্রদান। রাতদিন ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোগীদের মোটর বাইকের পিছনে চাপিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্র অথবা জেলা হাসপাতালে। আবার তাদেরকে সুস্থ করে ফিরিয়েও নিয়ে এসেছেন বাড়িতে। আর এই কাজটি দীর্ঘদিন ধরে করে চলেছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, রাতারাতি তিনি হয়ে ওঠেন এলাকার মসিহা। তিনি হয়ে ওঠেন সবার প্রিয় ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা’য়, হাতে পান পদ্মশ্রী পুরস্কারও। কিন্তু এই ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা’য় আজ বড় সঙ্কটে পড়েছেন, আর এই সংকট থেকে তাঁকে উদ্ধার করার দায়িত্ব সামাজিক জীব হিসাবে আমাদেরও কিছুটা বর্তায়।

এই ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা’র আমরা সাথে আমরা কথা বলে জানতে পেরেছি, বিগত তিনমাস ধরে তিনি চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর চোখে বাসা বেঁধেছে বিরল রোগ, যে রোগে এখনো পর্যন্ত ভারতবর্ষে মাত্র ১২ জন আক্রান্ত। ডান চোখে হয়েছে অস্ত্রোপ্ৰচারও, কিন্তু এই রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজন বিপুল পরিমাণে অর্থ। এই রোগের চিকিৎসার জন্য যে ইনজেকশন দেওয়া হয় তার কম করে মূল্য প্রায় ২০০০০ টাকা। আর চিকিৎসার জন্য এ মাসেই তিনি হায়দ্রাবাদ যাওয়ার পরিকল্পনা নেন, প্রথম দফায় অর্থাভাবে সেই পরিকল্পনা আটকে গেলেও নানান সাহায্যে তিনি বর্তমানে হায়দ্রাবাদে চিকিৎসাধীন। কিন্তু তাঁর পক্ষে এই খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিকিৎসকরা জানান, সাব রেটিনাল নিও ভাসকুলার মেমব্রেন (সিএনভিএম) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন করিমুল। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, এই রোগে চোখের রেটিনার ব্লাড ভেসেল ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয়। চিকিৎসা না হলে এই রোগে দৃষ্টিশক্তি হারানোরও আশঙ্কা।

তাহলে কি করবেন? যে মানুষটা তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়টা অন্যদের প্রাণ বাঁচাতে এখান থেকে ওখানে ছুটে গিয়েছেন তাঁকে এইভাবে অর্থাভাবে চিকিৎসার অভাবে দৃষ্টিহীনতার দিকে ঠেলে ফেলে দেবেন? সামাজিক জীব হিসাবে আমাদেরও তো কিছু কর্তব্য বর্তায়। চলুন না, সবাই মিলে এই ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা’র পাশে দাঁড়ায়। পাশে দাঁড়াতে পারেন আপনিও –

অ্যাম্বুলেন্স দাদা’র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস

যেটির ফেসবুকে পোষ্ট করে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য আর্জি জানানো হয়েছে।

তিনি বর্তমানে হায়দ্রাবাদে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁকে সুস্থ করার জন্য মাসে একটি করে ইঞ্জেকশন দেওয়া দরকার হয়। যার দাম প্রায় ২০ হাজার টাকা। তিন মাস দিলেই অন্তত কিছুটা উপকার পাওয়া যাবে।