কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে কেন অনড় কৃষকরা, তাদের বিরোধিতার কারণ কি

নিজস্ব প্রতিবেদন : কৃষি আইন পাস হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে এই কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা গেছে বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের। তবে ইদানিংকালে এই কৃষি আন্দোলন সবথেকে বেশি জোরদার হয়ে উঠেছে। আর এই আন্দোলন নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা দেশ, উত্তাল রাজধানী দিল্লি। দিল্লিতে এই কৃষি আন্দোলনে সামিল হয়েছেন উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব সহ বিভিন্ন এলাকার লক্ষ লক্ষ কৃষক। কিন্তু প্রশ্ন হল এই কৃষকরা কেন এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় মনোভাব নিয়ে চলছেন? নতুন কৃষি আইন নিয়ে কোন কোন বিষয়গুলি সমস্যা তৈরি করেছে?

মূলত এই কৃষি আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান সহ উত্তর প্রদেশের বড় অংশের কৃষকরা সরব হয়েছেন। বিদ্রোহের মূল কারণ হলো সরকারি সহায়তা বন্ধ হওয়া। কৃষকদের আশঙ্কা, এই কৃষি আইনের ফলে কৃষি ব্যবস্থা বড় বড় কর্পোরেট হাউসের অধীনে চলে যাবে আর তাদের অধীনেই বাঁচতে হবে কৃষকদের। তাদের মূল আশঙ্কা, কৃষি ব্যবস্থায় বেসরকারিকরণ ঘটবে।

এই কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কেবলমাত্র কৃষকরা এনেছেন তা নয়। এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। যে মধ্যস্বত্বভোগীদের সাথে কৃষির সরাসরি কোনো সম্পর্ক না থাকলেও কৃষকদের সাথে তারা বাজারের যোগাযোগ স্থাপনে বড় ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাদের আশঙ্কা নতুন এই কৃষি আইনের কারণে তাদের পেটে লাথি পড়তে পারে। আর এইসব আশঙ্কা থেকেই তারাও এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন।

পাশাপাশি কৃষি আইনের ফলে রাজ্য সরকারের রাজস্বের ক্ষতি হবে এমনটাও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এপিএমসি মাণ্ডিগুলি থেকে রাজ্য সরকার কর বা ফি পায়।আর এই নতুন কৃষি আইনের ফলে মান্ডিগুলির গুরুত্ব কমে যাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষকরা মান্ডির বাইরেও স্বাধীনভাবে নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।

পাশাপাশি কর্পোরেট হাউসগুলির হাতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে টাকা এবং ক্ষমতা দুইই। এর পাশাপাশি কর্পোরেট হাউসে শোনার মতো কেউ নেই। এসব সেক্টরগুলিতে রাজনৈতিক প্রভাব পরে যথেচ্ছভাবে। যে কারণে চাষীদের বোকা বানানোর সম্ভাবনাও প্রবল থাকছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কর্পোরেট হাউসের মালিকরা বড় বড় কৃষকদের সাথে চুক্তি করে নিতে পারেন। আর এমনটা হলে সমস্যায় পড়বেন ছোট ছোট কৃষকরা। আর এই সকল আশঙ্কার জেরেই কৃষকদের দাবি অবিলম্বে কৃষি সম্পর্কিত তিনটি আইন ফারমার্স প্রডিউস ট্রেড এন্ড কমার্স আইন ২০২০, ফারমার্স এগ্রিমেন্ট অফ প্রাইস অ্যাসিওরেন্স এবং কৃষি পরিষেবা আইন ২০২০ ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন ২০২০ বাতিল করতে হবে।

যদিও কেন্দ্র সরকারের বক্তব্য সরকারি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোন ভাবেই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বন্ধ করা হবে না। এই আইনের ফলে কৃষকরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। চুক্তি করা অথবা না করার ক্ষেত্রে কৃষকদের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। কর্পোরেট সংস্থা চুক্তি লঙ্ঘন করলে চাষীদের জরিমানা এবং নির্ধারিত মূল্য দিতে হবে।

পাশাপাশি কেন্দ্রের এটাও দাবি যে এই আইনের ফলে কৃষকরা সরাসরি ক্রেতাকে কৃষি পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পাবেন। সে ক্ষেত্রে কাটমানি বা ফি দেওয়ার প্রশ্ন উঠে যাবে। এপিএমসি বাজারে স্বচ্ছতা আসবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হবে।