সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে একের পর এক উদ্যোগ সামনে আসছে।২০১৮ সালে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘাতেও জগন্নাথ মন্দির গড়ে তোলার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ বুধবার অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ দিনে খুলে যাচ্ছে দিঘায় নব নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের দরজা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে উদ্বোধন হবে উদ্বোধন হবে জগন্নাথ মন্দির।
তবে দিঘায় নব নির্মিত এই জগন্নাথ মন্দির ধাম বলে প্রচারিত হচ্ছে। আসলে রাজনীতির ময়দান থেকে উঠে এসেছিল এই বিতর্ক। যদিও পরবর্তীতে অনেকেই এর আভিধানিক বা ঐতিহ্যগত দিক নিয়েও সওয়াল করেছেন। এখন সকলের মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, যে মন্দিরে এখনো ভগবানের প্রাণ প্রতিষ্ঠা থেকে উদ্বোধন কিছুই সম্পন্ন হয়নি, তাকে কী আদেও ধাম বলা যথার্থ?
আসলে ধাম কথাটির অর্থ কী?
নানা অভিধান থেকে জানা গিয়েছে ধাম কথাটির প্রকৃত অর্থ তীর্থস্থান বা আবাস। এক্ষেত্রে আবাস যেমন সাধারণ মানুষেরও হতে পারে অন্যদিকে ভগবানের নামেও হতে পারে। তবে প্রকৃত তীর্থস্থান হওয়ার শর্ত হল তাকে দেবতা বা মহাপুরুষের লীলা বা অধিষ্ঠানের স্থান হতে হবে। এই বিষয়ে এক সংস্কৃতজ্ঞ এর মতামত, ধাম কথার মানে তেজ, জ্যোতিও হয়। জয়তি কনকঃ ধামা কৃষ্ণ চৈতন্য নামে। তিনি আরও বলেছেন, তেজোদীপ্ত কেউ জন্মগ্রহণ করলে বা প্রতিষ্ঠা করলে সেটি ধাম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যেহেতু নবদ্বীপের বুকে শ্রী চৈতন্যদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাই সেটি ধাম হিসেবে পরিচিত।
ইস্কনের মেচেদা শাখার সম্পাদক অমলেন্দু জানার তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, “দিঘায় যা হচ্ছে তাকে কোনও দিক থেকেই ধাম বলে অভিহিত করা চলে না। যেসব পর্যটক দিঘায় সময় কাটাতে যাবেন তারা অবশ্যই মন্দির দর্শন করবেন। কিন্তু দেশের চার ধামের একটা নির্দিষ্ট ডেমোগ্রাফি রয়েছে। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব আর পশ্চিম প্রান্তে গড়ে উঠেছে সেই সমস্ত ধাম।” অন্যদিকে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মহিষাদল শাখার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌতম মহারাজের তরফে জানানো হয়েছে, “ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, কোনও জায়গায় ধাম তখনই গড়ে ওঠে যখন সে স্থানে মহাপুরুষের জন্ম হয়। পুরীতে মহাপ্রভু অবস্থান করেছিলেন। তাই পুরীতে ধাম গড়ে উঠেছে।’’
দিঘার বুকে নব নির্মিত গড়ে ওঠা জগন্নাথ মন্দিরকে সরকারি ই-টেন্ডারের নথিতে এদিকে ‘জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। মন্দির শব্দের কোনও অস্তিত্ব নেই সেখানে। অন্যদিকে দিঘার বুকে পুরনো একটি জগন্নাথ মন্দিরের অস্তিত্ব রয়েছে। সেটিকে নব নির্মিত মন্দিরের জগন্নাথের মাসির বাড়ি হিসেবে ঘোষণা করা হবে। ওই পুরোনো জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তথা জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য পূর্ণচন্দ্র নন্দ এর তরফে জানা গিয়েছে, “পুরীতে জগন্নাথ দেবের মন্দির স্থাপনের নেপথ্যে বহু ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। যা রাজা-রাজড়াদের হাত ধরে গড়ে উঠেছে। দিঘায় আগে পুরনো মন্দির ছিল। এখন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে মহাপ্রভুর মন্দির নির্মাণ হয়েছে।”
রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি যদিও এই নব নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরকে ধাম বলতে নারাজ। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর তরফে আগেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, নতুন জগন্নাথ মন্দির ধাম নয়। গত রবিবার তার মুখে শোনা যায়, “ওটা মন্দির নয়। ধামও নয়। কেউ মুখে বলতেই পারেন।” কিন্তু রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষের তরফে ধাম প্রসঙ্গে পাল্টা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধামের পরিবর্তন ঘটে। যে মন্দিরে পুজো, প্রতিষ্ঠা, আরতি হবে সেটাই বাড়ি হিসেবে বিবেচিত হবে। বিজেপি নেতারা যত মন্দিরে যান ওই মন্দিরের সঙ্গে তার দেবতার সম্পর্ক রয়েছে, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারবেন!”
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের তরফে মন্দির প্রাঙ্গণ সহ আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আটোসাটো করতে জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও সেখানে উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যেন একচুলও ফাঁক না থাকে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যার কারণে এখন খুশির হাওয়া বইছে সমুদ্র সৈকতে। সব মিলিয়ে একবারে জমজমাট পরিবেশ বলা যেতে পারে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা বা দুর্ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।এমনিতেই বছরের অধিকাংশ সময়ে দিঘায় পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। এবছর জগন্নাথ মন্দির তৈরির পরে ভিড় যে আরও কয়েক গুণ বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।