মাধ্যমিকে ৬৪০ পেয়ে দিনমজুর ঘরের মেয়ের লক্ষ্য সংসারের অভাব-অনটন দূর করা

লাল্টু : কোনরকম গৃহশিক্ষক ছাড়াই চলতি বছর মাধ্যমিকে ৬৪০ পেয়ে নজির গড়েছে বীরভূমের দিন আনা দিন খাওয়া দিনমজুর ঘরের মেয়ে শিল্পী পাতর। ভবিষ্যতে সে ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখছে। পাশাপাশি সংসারে আর্থিক অনটনের কারণে ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা না করা হলেও নার্স অথবা অঙ্কের শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন তার চোখেমুখে। অন্যান্য পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি ইচ্ছাই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এই শিল্পীর সামনে রয়েছে তিনটি ইচ্ছা, লক্ষ্য যে করেই হোক যেকোনো একটি পূরণ করা। তিনটি ইচ্ছার মূল্য তাদের সংসারের অভাব-অনটন। সংসারের অভাব অনটনের মাঝেই যেকোনো একটি ইচ্ছা পূরণ করে তার এখন লক্ষ্য সংসারের হাল ধরে বাবা-মায়ের দুঃখ কষ্ট দূর করা। তাই এ শুধু তার ইচ্ছা নয়, সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাকে এটা করতেই হবে। তবেই তো বাবা মায়ের এত কষ্ট সার্থকতা পাবে।

দুবরাজপুর ব্লকের পন্ডিতপুর গ্রামের শিল্পী পাতরের বাবা বিমল পাতর একজন সামান্য দিনমজুর। এখানে ওখানে কাজ করে সারাদিনের আয়ের উপর নির্ভর করেই তাদের সংসার চলে অভাব অনটনের মধ্যে। শিল্পীর মা একজন গৃহবধূ। আর এই অভাব-অনটনকে দূরে সরিয়ে নিজস্ব একাগ্রতায়, প্রচেষ্টায় শিল্পী এবছর সারদেশ্বরী বিদ্যামন্দির ফর গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিকে রাজ্যের অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের টেক্কা দিয়ে ৬৪০ নম্বর অর্জন করেছে। যদিও এত নম্বর পেয়েও তার আক্ষেপ ইংরেজি বিষয়ে নম্বর কম হওয়ায়। তবে সে সেই আক্ষেপকে ভুলে এখন অদূর ভবিষ্যতের দিকে ছুটে চলেছে। অভাব-অনটনের মাঝেই তার স্বপ্ন বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার। আর তারপর ডাক্তারি, নার্স অথবা অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করে যেকোনো একটি পথ বেছে নেওয়া। যদিও অভাবের সংসারের এই ছাত্রীর স্বপ্ন ভবিষ্যতে কতটা পূরণ হয় তাই এখন দেখার।

শিল্পী বাংলায় পেয়েছে ৯০, ইংরেজিতে ৮০, অঙ্কে ৯৯, ভূগোলে ৯৭, ইতিহাসে ৯০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৪ আর ভৌত বিজ্ঞানে ৯০। সে তার এই ভালো ফলাফলের জন্য স্কুলের শিক্ষিকাদের অবদান উল্লেখ করেছে। তার বক্তব্য স্কুলের শিক্ষিকা তাকে সাহায্য না করলে এত ভাল ফলাফল হতে পারতো কিনা সংশয় ছিল।

শিল্পী পাতরের অভাব-অনটনের সংসার থেকে উঠে এসে এত সুন্দর ফলাফল করার খবর পেয়ে ইতিমধ্যেই দুবরাজপুর আশ্রমের পক্ষ থেকে তার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। দুবরাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ওই ছাত্রীর উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনার সমস্ত দায়-দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়েছে। এমনকি গতকাল দুবরাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী ভুপানন্দ মহারাজের জন্মদিনে শিল্পীকে একটি বই এবং নগদ তিন হাজার টাকা দিয়ে সংবর্ধনা দেয় আশ্রম কর্তৃপক্ষ।