গোটা হাসপাতালকেই কোয়ারেন্টাইনের জন্য দিয়ে দিলেন ট্যাক্সিচালক সহিদুল

নিজস্ব প্রতিবেদন : দেশে করোনা সংক্রামিতের সংখ্যা ৭ হাজারের কাছাকাছি। রাজ্যেও বাড়ছে সংক্রামিতের সংখ্যা সমানভাবে। আর শুধু আমাদের দেশ তথা রাজ্য নয় গোটা বিশ্বে করোনা থাবা বসিয়েছে। যে কোনো নিউজ চ্যানেল খুললেই এখন করোনাই একমাত্র ব্রেকিং। তবুও কিছু মানুষ এখনও সচেতন হন নি। লকডাউনকে উপেক্ষা করে আজও কিছু মানুষ খাঁসির দোকানে ঠেসাঠেসি করে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এর পরিণতি কোথায়! আর কবেই বা মানুষ সচেতন হবেন!

এই করোনাকে রুখতে লকডাউন যেমন দরকার তেমনি দরকার সতর্কতা, সচেতনতা। দরকার প্রচুর পরিমাণে কোয়ারেন্টাইনের জন্য জায়গা। কিন্তু অনেক হাসপাতালই এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছেন না বলে অভিযোগ। অনেক হাসপাতাল এগিয়ে আসলেও স্থানীয়রা বিক্ষোভ করছেন এমন খবর আমরা হামেশাই পড়ছি। কিন্তু ব্যতিক্রমও কিছু আছে ব‌ইকি! আজও সংসারে ভালো মানুষ আছেন যারা করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে আসছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এইরকমই দেশের এমন ভয়ঙ্কর দুর্দিনে এগিয়ে আসলেন সহিদুল বাবু। যিনি পেশায় একজন ট্যাক্সিচালক।

হ্যাঁ, সৎ মানসিকতা থাকলে কী না হয়! বারুইপুরের ট্যাক্সিচালক সহিদুল লস্কর তাই এই সময় এগিয়ে আসলেন। তিল তিল করে পুঁজি জমিয়ে যিনি তৈরি করেন একটি গোটা হাসপাতাল! এবার সেই হাসপাতালই তিনি দিয়ে দিলেন করোনার কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালু করার জন্য। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন বারুইপুরের বিডিও মোশারফ হোসেন।

এই হাসপাতালে কতগুলি কোয়ারেন্টিন সেন্টার করা যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে?

সহিদুলের হাসপাতালে ৪০ থেকে ৫০ টি বেডের কোয়ারেন্টিন সেন্টার করা যেতে পারে বলেই অনুমান করা যাচ্ছে।

হাসপাতাল গড়ার পিছনের কারন কী ছিলো?

সহিদুলের বোন মারুফা ২০০৪ সালে মারা যান মূলত চিকিৎসার অভাবেই। অনেক হাসপাতাল ঘুরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও বোনের জীবন বাঁচাতে পারেন নি তিনি। তখনই স্থির করে ফেলেন আর তিনি কাউকে চিকিৎসার অভাবে মরতে দেবেন না।

সাধারণ মানুষের দান করা অর্থ আর নিজের সঞ্চয় দিয়ে গড়ে তোলেন হাসপাতাল। সহিদুলের এই হাসপাতালটি তিন তলা।

সহিদুলের পড়াশোনা / পরিচয়?

বারুইপুরের সীতাকুণ্ডু থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন সহিদুল ১৯৯১ সালে। এরপর তিনি চম্পাহাটি সুশীল কর কলেজে ভর্তি হন। যদিও গ্র্যাজুয়েট কমপ্লিট করতে পারেননি সহিদুল অভাবের কারণে।এরপরই ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি ট্যাক্সি চালাতে শুরু করেন, সংসারের হাল ধরেন। ট্যাক্সি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে লেখেন কবিতাও। নরেন্দ্র মোদির ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের পঞ্চাশতম সম্প্রচারে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সহিদুল। মোদীজি তাঁর কাজের প্রশংসা করেন।

হাসপাতালের মধ্যেই এক ঘরে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন সহিদুল। এখন কোয়ারেন্টিন সেন্টার হলে তিনি তার পরিবারকে নিয়ে কোথায় যাবেন?

শান্ত ভাবেই সহিদুল বলেন‌ আমার রাজ্যের মানুষগুলির জন্য আগে একটা ব্যবস্থা করি। নিজেদের কথা পরে ভাবা যাবে।

বিডিও মোশারফ হোসেন কী বলেছেন এবিষয়ে?

মোশারফ হোসেন জানান, “সহিদুলের
হাসপাতালের পরিবেশ বেশ ভালো আর স্বাস্থ্যকর। সহিদুল যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তার এই সচেতন পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।” সহিদুল জানিয়েছেন, বিডিও সাহেবই ওনাদের অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করবেন।

দেশকে ভালোবাসলে আপনিও এগিয়ে আসুন। করোনা মোকাবিলা করতে আমদের প্রত্যেককেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে আর কঠোর ভাবে লকডাউন মেনে চলতে হবে।