নৈশলীলায় বেরোন আকালী মা! হাজার চেষ্টা করেও গুহ্য কালীকে হাতে পাননি ব্রিটিশরা

নিজস্ব প্রতিবেদন : বীরভূম জেলার ভদ্রপুর গ্রামের পশ্চিমে আকালিপুর গ্রাম আর এখানেই আছে মহারাজ নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত গুহ্য কালী মন্দির। নন্দকুমার ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে মায়ের এই মূর্তিকে তন্ত্র সম্মতভাবে বেদীমূলে স্থাপন করেন। গুহ্য কথার অর্থ যা গোপনে রয়। এই মাতৃমূর্তি ও তাই গৃহীদের কাছে অপ্রকাশ্য, একমাত্র সাধকদেরই আরাধ্যা দেবী তিনি। সচরাচর কালীমূর্তি যেমন হয় গুহ্যকালী মূর্তি সে রকম নয়।

এখানে দেবীকে দেখা যায় পা মুড়িয়ে বসে থাকা অবস্থায়। মন্দিরের গর্ভগৃহের পঞ্চমুন্ডির আসনের উপর সর্পের বেদীতে দেবী পা মুড়িয়ে বসে আছেন। কষ্টি পাথরের তৈরি দেবী মূর্তি আজকের নয়, এই মূর্তির এক বিশাল ইতিহাস আছে,যে ইতিহাসের শুরু মগধরাজ জরাসন্ধের সময় থেকে।

মগধরাজ জরাসন্ধ এই গুহ্যকালী বিগ্রহ গোপনে মন্দির স্থাপন করে পাতালে পুজো করতেন। তারপর বহু বছর কেটে যায়। এরপর মহারাজ জরাসন্ধের মৃত্যু হয়। কালের নিয়মে সেই মন্দির কোথায় হারিয়ে যায় কিন্তু থেকে যায় বিগ্রহটি। আনুমানিক ২৩৫ বছর আগে রানী অহল্যা বাঈ স্বপ্নে একটি শিবলিঙ্গের সন্ধান পান। স্বপ্নে পাওয়া এই শিবলিঙ্গ অন্বেষণ করতে গিয়ে তিনি বিভিন্নস্থানে খনন কার্য শুরু করেন। তখনই তিনি মায়ের এই গুহ্যকালী মূর্তি পান। রানী অহল্যা বাঈ মায়ের এই মূর্তি কাশীরাজ চৈত সিংকে দান করেন।

চৈত সিং মায়ের এই মূর্তির পূজার্চনা শুরু করেন। তবে এই সময় ওয়ারেন হেস্টিংসের নজরে পড়ে যায় মায়ের এই অপরূপ মূর্তি। ওয়ারেন হেস্টিংস সেই সময় কাশীতেই ছিলেন, মায়ের কারুকার্যমন্ডিত অপরূপ মূর্তি দেখে তার লোভ হয়। আর তিনি মায়ের এই মূর্তিটিকে ইংল্যান্ডের মিউজিয়ামে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে শুরু করেন। তার এই গোপন পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে যান চৈত সিং। তিনি তখন মায়ের মূর্তিটিকে গঙ্গাবক্ষে লুকিয়ে রাখেন। আর তিনি রটিয়ে দেন যে মূর্তি চুরি গিয়েছে।

অপরদিকে মহারাজ নন্দকুমার মাকে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাশি যাত্রা করেন আর তিনি চৈত সিংকে সব খুলে বলেন। চৈত সিং সব শুনে তো হাতের কাছে চাঁদ পেলেন। তিনি সানন্দে নৌকা করে নন্দকুমারের সাথে মূর্তি পাঠিয়ে দিলেন।

নন্দকুমার সেই মূর্তি নিয়ে তারকা ব্রাহ্মণী নদী পার করে চলে এলেন আকালিপুরে। এখানে এসে ব্রাহ্মণী নদী তীরে শ্মশানের পাশে নিরিবিলি স্থানে আছে মায়ের আটকোনা ইটের মন্দির।সর্বসাধারণের কাছে এই মন্দিরের নির্মাণ বড় সাদামাটা মনে হলেও তন্ত্র সম্মতভাবে সাধনার উপযোগী স্থানে এই মন্দির নির্মিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নন্দকুমারের অসংখ্য প্রজাদরদী কাজের জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস একসময় তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন ও তার বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র শুরু করেন। পরবর্তীকালে ওয়ারেন হেস্টিংস মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেন নন্দকুমারকে ও বিচারে তার ফাঁসি হয়। সেই সময় থেকে শুরু করে আজও নন্দকুমারের বংশধররা মায়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে বহাল রয়েছেন।