১৫২৮ সালের মসজিদ থেকে ২০১৯ সালের আদালতের শুনানি, অযোধ্যা মামলার সম্পূর্ণ ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদন : গত বছর ১৭ ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবসর গ্রহণ আগেই অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়ে যাবে তা একপ্রকার ঠিকই ছিল। আর সেই মতোই নভেম্বর মাসের ৯ তারিখ শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে। রায় যায় রাম মন্দির তৈরির দিকে, তবে বিগত কয়েক দশক ধরে চলা এই মামলায় কখন কি হয়েছে?

১৫২৮ সালে বাবরের কম্যান্ডার মীর বকি এই মসজিদের নির্মাণ করিয়েছিলেন।

১৮৮৫ সালে মহন্ত রঘুবীর দাস ফৈজাবাদের জেলা আদালতে এই বিতর্কিত জমির বাইরে ছাদ তৈরি করার অনুমতি চেয়েছিলেন।

১৯৪৯ সালের ২২শে ডিসেম্বর মধ্যরাতে মসজিদের প্রধান গম্বুজের নিচে রামলালার মূর্তি বসানো হয়৷ দাবি, ওখানেই রাম চন্দ্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৫০ সালে গোপাল সিমলা বিশারদ রামলালার মূর্তি পূজা করার অনুমতি চেয়েছিলেন।

নির্মাহি আখাড়া আবেদন দাখিল করে বিতর্কিত জায়গা দখল করার দাবি করেছিল।

১৯৮৯ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই বিতর্কিত স্থলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয়।

১৯৯১ সালে কল্যাণ সিং সরকার বিতর্কিত ওই এলাকা ঘিরে মোট ২.৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে।

৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানীর নেতৃত্বে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়।

১৯৯৩ সালে উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের মধ্যেই কেন্দ্রের নরসিমা রাও সরকার ওই ২.৭৭ একর জমিকে ঘিরে মোট ৬৭.৭০৩ একর অধিগ্রহণ করে।

আশেপাশের এলাকা ছিল মূলত হিন্দুদের। ন্যাসের কাছে ছিল ৪২ একর। প্রথমে অর্ডিন্যান্স জারি হয়ে পরে সংসদে আইন পাশ হয়।

১৯৯৪ সালে আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা।

১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট ইসমাইল ফারুকির আবেদনের ভিত্তিতে বলেছিল যে, মসজিদ ইসলামের অভিন্ন অঙ্গ না।

সুপ্রিম কোর্টে রায়, বাবরি মসজিদের ০.৩১৩ একর জমির অধিকার দাবি মুসলিমদের।

মামলা জেতার পর মুসলিমদের অধিকার কায়েম করতে যাতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য আশেপাশের জমি সরকারের হাতে থাকে।

২০০২ সালে বিতর্কিত জমিতে মালিকানার অধিকার নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।

২০০৩ সালে ঘেরা জমিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ শিলা পুজোর প্রস্তুতি নিলে আবার মামলা হয়।

উচ্চ আদালত রায় দেয়, ঘেরা জমিতে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হবে না।

৮ বছর পর ২০১০ সালে হাইকোর্ট ২ঃ১ অনুপাতে বিতর্কিত জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মাহি আখারা আর রামলালার মধ্যে বণ্টন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা মামলায় হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে।

এরপর ২০১৬ সালে বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী সুব্রক্ষণ্যম স্বামী সুপ্রিম কোর্টে রাম মন্দির নির্মাণের আবেদন জানান।

কিন্তু ২০১৭ সালে প্রাক্তন চীফ জাস্টিস জেএস কেহর এই মামলাকে আদালতের বাইরে নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট শুনানির জন্য ৩ সদস্যের একটি বেঞ্চ গঠন করে।

২০১৭ সালের ১লা ডিসেম্বর ৩২ জন সমাজসেবী হাইকোর্টে একটি আবেদন দাখিল করে।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকদের আবেদন নিয়ে শুনানি শুরু করে।

২০১৮ সালে আদালত সুব্রক্ষণ্যম স্বামীর সমস্ত আবেদন খারিজ করে দেয়।

সুপ্রিম কোর্ট শেষ সিদ্ধান্তের জন্য ৫ জন বিচারকের বেঞ্চে এই মামলা ট্র্যান্সফার করার দাবি খারিজ করে ২৯ শে অক্টোবর ২০১৮ তে রোজ শুনানি হওয়ার কথা জানায়।

সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার শুনানি ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে দেওয়া হয়।

২০১৯ সালের ২৫শে জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ সদস্যের নতুন বেঞ্চ গঠন করে। যে বেঞ্চে স্থান পান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, জাস্টিস বোবড়ে, জাস্টিস চন্দ্রচুর, জাস্টিস অশোক ভূষণ আর জাস্টিস নজীর।

২০১৯ সালের ৬ই আগস্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলা নিয়ে রোজ শুনানি শুরু হয়। শেষ হয় অক্টোবর।

অবশেষে ৯ই নভেম্বর ২০১৯ শনিবার সকাল ১০:৩০ টায় শুরু হয় এই বিতর্কিত মামলার রায়দান। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে দু’পক্ষের সওয়াল ও দাবির প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেন, অযোধ্যায় বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমির মালিকানা আপাতত যাবে সরকারের হাতে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট বা অছি পরিষদ গঠন করে সেই জমির মালিকানা তাদের হাতে তুলে দেবে। সেই সঙ্গেই অযোধ্যায় বিতর্কিত জমির থেকে দূরে মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি দিতে হবে সরকারকে।

সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের আরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা আসতে সময় লাগবে। তবে এখনও মোটামুটি ভাবে যা পরিষ্কার তাতে বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিতে মন্দির নির্মাণের পক্ষেই রায় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।