বক্রেশ্বর চেনেন, বক্রেশ্বর জানেন! কিন্তু জানেন না পুরাতন বক্রেশ্বর! বীরভূমের ঘুমিয়ে থাকা ঐতিহ্য

বক্রেশ্বর ধাম! বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। বক্রেশ্বর ধামে ভক্তরা একদিকে যেমন বক্রমুনির আরাধনায় আসেন, ঠিক সেই রকমই আবার সতীপিঠের ঐতিহ্যের ক্ষেত্রেও ভক্তরা এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও রয়েছে এখানে একটি প্রাকৃতিক গিজার অর্থাৎ উষ্ণ প্রস্রবণ, যেখানে সারা বছরই গরম জল পাওয়া যায়। এসবের কারণেই বক্রেশ্বর ধাম এখন রাজ্যের পাশাপাশি ভিন রাজ্যের মানুষদের কাছেও অনেকটাই জনপ্রিয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে যদি বক্রেশ্বর ধামের কথা ছেড়ে এখন পুরাতন বক্রেশ্বরের কথা বলা হয় তাহলে তা কেমন মনে হতে পারে। অনেকেই ভাবতে পারেন, হয়তো বক্রেশ্বর ধামের কাছেই কোথাও রয়েছে পুরাতন বক্রেশ্বর বা সেখানকার কোন জায়গাকে পুরাতন বক্রেশ্বর বলা হয়ে থাকে। কিন্তু তা নয়, নতুন বক্রেশ্বর অর্থাৎ যা বক্রেশ্বর ধাম নামে পরিচিত সেটি দুবরাজপুর থানার অন্তর্গত বক্রেশ্বরে অবস্থিত। কিন্তু পুরাতন বক্রেশ্বর অবস্থিত খয়রাশোল ব্লকের অন্তর্গত লোকপুর থানা এলাকায়। যে দুই জায়গার মধ্যে দূরত্ব অন্ততপক্ষে ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার। তবে নতুন বক্রেশ্বর বলা হোক অথবা পুরাতন বক্রেশ্বর, দুই জায়গা এবং দুই ধামের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বক্রমুণির সম্পর্ক, রয়েছে আরও একাধিক মিল। যেগুলি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না এবং পুরাতন বক্রেশ্বরের সেই ভাবে প্রচার না থাকার কারণে আজ এমন ঐতিহ্যবাহী জায়গাটি অবহেলিত। যদি প্রশাসন চাই তাহলে এই জায়গাটিও বর্তমান বক্রেশ্বর ধামের মতোই একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে, খুলে যেতে পারে এলাকার মানুষদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দুয়ার।

পুরাতন বক্রেশ্বর অবস্থিত খয়রাশোল ব্লকের অন্তর্গত লোকপুর থানার দেবগঞ্জে। কথিত আছে এখানেই বক্রমুনি সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পুরাতন বক্রেশ্বর ছেড়ে নতুন বক্রেশ্বর অর্থাৎ দুবরাজপুর থানার বক্রেশ্বর ধামে চলে আসেন। সেই মতো এখানে প্রত্যেক বছর চৈত্র মাসে বার্ষিক অনুষ্ঠান হয়। তবে এই বার্ষিক অনুষ্ঠান ছাড়া খুব একটা প্রচলন নেই পুরাতন বক্রেশ্বরের।

পুরাতন বক্রেশ্বরের খুব একটা প্রচলন না থাকলেও এখানে কিন্তু নতুন বক্রেশ্বরের মতোই রয়েছে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ। এছাড়াও রয়েছে বক্রমুনির সমাধিস্থল, শ্মশান ভূমি, শিব মন্দির, কালীমন্দির, ভক্তদের বিশ্রামাগার ইত্যাদি। নতুন বক্রেশ্বরের অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় এই পুরাতন বক্রেশ্বরে। আবার এসবের বাইরেও পুরাতন বক্রেশ্বরে বেশ কিছু জিনিস রয়েছে যেগুলি নতুন বক্রেশ্বরে খুঁজে পাবেন না। যেমন বিশাল বিশাল গাছ, ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশ, পাখিদের কলতান ইত্যাদি। সুতরাং যারা নতুন বক্রেশ্বর বা বক্রেশ্বর ধাম এসেছেন অথচ পুরাতন বক্রেশ্বরের বিষয়টি একেবারেই জানতেন না, তারা যেমন এই ভিডিও থেকে অনেক কিছু জানলেন ঠিক সেই রকমই এই ভিডিওটি অন্যদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া আপনাদের দায়িত্ব। বিশেষ করে বীরভূমের মতো এলাকায় এমন একটি ঐতিহ্যবাহী জায়গা রয়েছে যাকে আর লুকিয়ে না রেখে সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার নৈতিক কর্তব্য।