সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে, ঠিক সেই সময় কিরানা হিল অঞ্চলে এক হালকা ভূকম্পন অনুভূত হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই এলাকায় পাকিস্তানের একটি গোপন পরমাণু কেন্দ্র অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়। যদিও একাংশের দাবি, এটি ছিল পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফল, পাকিস্তান সরকার বলেছে যে এটি নিছকই একটি স্বাভাবিক ভূমিকম্প।
এমন এক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন থেকে, যা বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। লস আলামোস ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় জানিয়েছেন, কিছু ভূমিকম্প প্রকৃতপক্ষে গোপনে চালানো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার ফলাফল হতে পারে। তাঁদের মতে, ভূমিকম্পের সময় মাটির যে কাঁপুনি হয়, তা অনেক সময় পারমাণবিক বিস্ফোরণের কম্পনের সঙ্গে প্রায় একই রকম, যা পার্থক্য করা অত্যন্ত কঠিন।
আরও পড়ুন: ২৩ জেলায় শপিং মল, আসছে ‘বিশ্ব অঙ্গন’, একাধিক বড় প্রকল্প ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এমনকি উন্নত প্রযুক্তির সহায়তাতেও যদি বিস্ফোরণ ও ভূমিকম্প কাছাকাছি সময়ে ঘটে, তা হলে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিও বিভ্রান্ত হতে পারে। উত্তর কোরিয়ার একটি উদাহরণ গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। গত দুই দশকে দেশটি ছয়বার পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। ওই অঞ্চলগুলোতে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ যন্ত্র বসানো হয়েছিল এবং দেখা গেছে, এসব এলাকায় প্রায়ই ছোট-মাত্রার কম্পন হয়ে থাকে।
এটি ইঙ্গিত করে যে, পারমাণবিক পরীক্ষা ও ভূমিকম্পের কম্পন এতটাই মিল রয়েছে যে তা পৃথক করা জটিল। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষক জোশুয়া কারমাইকেল ও তাঁর দল ভূকম্পনের বিভিন্ন তরঙ্গ (পি-ও এস-তরঙ্গ) নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁরা এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা ১.৭ টনের গোপন বিস্ফোরণ প্রায় ৯৭% সময় সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারে। তবে, যদি ভূমিকম্প ও বিস্ফোরণ ১০০ সেকেন্ডের মধ্যে এবং ২৫০ কিলোমিটারের ভেতরে ঘটে, তাহলে এই পদ্ধতির কার্যকারিতা কমে গিয়ে মাত্র ৩৭% হয়।
এই গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যদি প্রকৃতি ও মানুষের তৈরি কম্পন একসঙ্গে ঘটে, তাহলে সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তিও বিভ্রান্ত হতে পারে। গবেষকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, যেসব অঞ্চল নিয়মিত ভূমিকম্পপ্রবণ, সেসব স্থানে গোপনে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে পড়েছে। ফলে এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য এক নতুন হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।