দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া জওয়ানের স্ত্রী যোগ দিলেন সেনাবাহিনীতে, গর্বিত দেশ

শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী : দেশের জন্য কালে কালে কতো না বীর সন্তানরা শহীদ হয়েছেন। তাঁদের বীরগাঁথার কথা চিরকাল চর্চিত হয়ে আসছে। এমনই এক বীর সন্তানের অমর কাহিনী নিয়েই কথা বলবো।

২০১৮ সালে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে গিয়ে গুলির লড়াইয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল শহীদ সেনা দীপক নৈনিওয়ালকে। দেশমাতার কোলে মৃত্যুতে ঢলে পড়েছিলেন তিনি। এই বীরসন্তানের স্ত্রী জ্যোতি নৈনিওয়াল স্বামীর আদর্শকে ধরে রাখার উদ্যেশ্যে ফের দেশ মাতৃকার সেবাতেই নিজেকে নিয়োজিত করলেন। শনিবার অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে তিনিও দেশ সেবায় যোগ দিলেন সেনাবাহিনীতে। ইতিহাস রচিত হলো যেন তাঁর এই সিদ্ধান্তে। যেখানে স্বামীকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে তিনি একটু অন্যভাবে ভেবেছেন। তিনিও শহীদ স্বামীর নির্ভীক স্ত্রীর যথাযথ দায়িত্ব পালন করার জন্যই দেশের স্বার্থে নিজেকে উৎস্বর্গ করলেন।

শনিবার সেনাবাহিনীতে যোগদানের সময় জ্যোতির সাথে তাঁর দুই সন্তানও সেখানে উপস্থিত ছিল। ওই দিন কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তাঁর আদর্শ অনুযায়ী, তিনি ওই স্থানে কখনও আসতে পারবেন সেকথা ভাবতেই পারেননি পূর্বে। একজন সাধারণ গৃহবধু থেকে স্বামীর আদর্শে সেনাবাহিনীতে তাঁর যোগদান সবটাই তাঁর কাছে স্বপ্নের মত। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন এই কাজে তাঁর স্বামীর মাহার রেজিমেন্ট যথেষ্ট সহায়তা করেছেন।

তিনি দেশের সমস্ত শহীদের স্ত্রীদের কাছে ওইদিন একটাই বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন যে, সন্তানদের ভবিষ্যতে শহীদ বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটা শহীদের স্ত্রীদের এভাবেই নিজেদের নতুন করে শুরু করা উচিত, যা দেখে সন্তানরাও দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।

স্বামীর হঠাৎ চলে যাওয়ার পরেই জ্যোতি মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন সেনাবাহিনীতে যোগদান প্রসঙ্গে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সেই মতো তাঁর প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল। চেন্নাইয়ে দীর্ঘ ১১ মাসের সেনা প্রশিক্ষণ শেষে তিনি অবশেষে সেনা লেফট্যানেন্ট পদে ওইদিন যোগদান করলেন সেনাবাহিনীতে।

নির্ভীক মায়ের এমন কাজে গর্বিত সন্তানরা। মেয়ে লাবণ্য ম
মাহার রেজিমেন্টকে এই কাজে তার মাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াতে সহায়তা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদজ্ঞাপনের সাথে সাথে মায়ের জন্য গর্ব অনুভব করছে সে কথা স্বীকার করে নেয় ওইদিন। আগামীদিনে সে মা বাবার আদর্শেই অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে চায় বলেও ইচ্ছা প্রকাশ করে। এমন সন্তানই তো চাই আমাদের দেশ মাতৃকার জন্য। তবেই তো রচিত হবে বীরগাঁথা। শহীদ সেনার স্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তকে সত্যিই কুর্নিশ জানাতেই হয়।