না খেয়ে ৩১০ কিমি হেঁটে বাড়ির পথে শ্রমিকরা, কোয়ারেন্টাইনের বন্দোবস্ত পুলিশের

লাল্টু : ভারতে দিনের পর দিন কোন ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে চলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেন দেশে ২১ দিনের লকডাউন জারি করার। এছাড়া আর কোন উপায় নেই বলেও জানান তিনি, পাশাপাশি দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন। করোনার হাত থেকে বাঁচতে লকডাউন মেনে বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের গৃহবন্দী করলেও সমস্যায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক সম্প্রদায়ের মানুষেরা। হাতে টাকা পয়সা শেষ হতে বসায় ঘরমুখো হতে শুরু করেন তারা। কিন্তু লকডাউন চলায় কোনো যানবাহন না মেলায় পায়ে হেঁটে ঘর পৌঁছানোর সিদ্ধান্তে পৌঁছান অজস্র শ্রমিক।

ঘরমুখো এই সকল শ্রমিকদের মধ্যে সোমবার একদল শ্রমিকের দেখা পাওয়া গেল বীরভূমের দুবরাজপুরে। জানতে পারা যায় তারা মালদা থেকে পুরুলিয়ায় গিয়েছিলেন কাজ করতে। কিন্তু লকডাউন হয়ে পড়ায় কাজ বন্ধ, ধীরে ধীরে হাতে থাকা টাকা-পয়সা শেষের দিকে। খাবার-দাবারের অসুবিধা হওয়ায় তারা বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যেহেতু কোনরকম যানবাহন চলছে না তাই ৩১০ কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটে মালদা পৌঁছানোর জন্য হাঁটতে শুরু করেন তারা। হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছান দুবরাজপুরে। সেখানে দুবরাজপুর থানার পুলিশ তাদের থামায়। তাদের মুখ থেকে পুরো ঘটনার কথা জানেন এবং ঐ সকল শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইনের বন্দোবস্ত করেন।

পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, আপাতত তাদের বক্রেশ্বরের একটি হোস্টেলে কোয়ারেন্টাইনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাদের খাওয়া-দাওয়া সমস্ত রকম বন্দোবস্ত সেখানে থাকবে। পাশাপাশি চলবে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। পরে পুলিশ তাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করবে।

এই সকল শ্রমিকদের তালিকায় রয়েছেন মোট ২১ জন শ্রমিক। যাদের মধ্যে ১০ জন পুরুলিয়া থেকে খাওয়া-দাওয়া না করে পায়ে হেঁটে মালদার পথে রওনা দিয়েছিলেন। আর বাকি আরও ১১ জন শ্রমিক রয়েছেন যারা অন্য কোথাও যাচ্ছিলেন।

পায়ে হেঁটে বাড়ির পথে যাত্রা করা শ্রমিকরা জানান, “গত ১০ দিন আগেই আমরা মালদা থেকে পুরুলিয়া গিয়েছিলেন কাজ করতে। কিন্তু তারপরেই এমন ঘটনা।কাজ না থাকায় বসে বসে খেতে খেতে টাকাপয়সা শেষের দিকে। শেষে আর খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক জুটছিল না।তাই অগত্যা কোনো গাড়ি না পেয়ে আমাদের পায়ে হেঁটে বাড়ি যাওয়ার উপায় বেছে নিতে হয়েছে।”

তবে এই ঘটনার পরে সমাজের অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, এই লোকগুলি পুরুলিয়া থেকে বীরভূম পর্যন্ত এতটা পথ হেঁটে চলে এলো অথচ রাস্তায় অন্য কোন থানার পুলিশের চোখে পড়লো না? বর্তমান পরিস্থিতিতে এমনটা খুবই বিপদজনক।এমনকি তারা খাওয়া-দাওয়া না করে এইভাবে হাঁটতে শুরু করেছেন তাতে তাদেরও চরম ক্ষতি।অন্য কোন থানার পুলিশ আগেই যদি তাদের থামিয়ে কোয়ারেন্টাইন ও খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত করতেন তাহলে ওই শ্রমিকগুলির অন্তত কিছুটা হলেও উপকার হত।