অন্ধকার ঘর ছাড়া হবেনা পুজো, শতাব্দী প্রাচীন রীতি দুবরাজপুরের শ্মশান কালীর

লাল্টু : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পুজোর মধ্যে কালীপুজো অন্যতম। তিথি এক হলেও স্থান বিশেষে এই কালীপুজো বিভিন্ন রীতিতে বিভিন্ন মতে বিভিন্ন জায়গায় হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি আলাদা এবং বিশেষত্বে ভরা কালীপুজোর দেখা মিলবে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত দুবরাজপুর শ্মশান কালী পুজোয়।

দুবরাজপুরের এই শ্মশান কালী বিগ্রহ সারা বছর ধরে মন্দিরে থাকে। দুর্গাপুজোর পর একাদশীতে বিসর্জন হয় এবং তারপরই মূর্তি তৈরি করার কাজ শুরু হয়। মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি জল কুন্ড। এই জল কুন্ডকে গঙ্গা কুন্ডও বলা হয়ে থাকে। পাহাড়ি এলাকার পাথরময় পরিবেশে ওই কুন্ডর কাছে মাত্র দু’ফুট মাটি খোঁড়া হলেই জল পাওয়া যায়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মায়ের মূর্তি তৈরি হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সেই জল শুকিয়ে যায়। মায়ের মূর্তি তৈরি থেকে রং সবই আলাদা বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণ। মূর্তি শুকানোর জন্য শ্মশান থেকে আনা হয় পোড়া কাঠের জ্বালানি, আনা হয় শবদেহের হাড় মায়ের অঙ্গরাগ করার জন্য। পুজো হয় সম্পূর্ণ তান্ত্রিক মতে। আর এই শ্মশানকালীর বিগ্রহ তৈরি করা থেকে শুরু করে পুজো সমস্ত কিছুর দায়িত্বে থাকে এলাকার বৈষ্ণব পরিবারের।

মন্দিরের পুরোহিত কৃষ্ণগোপাল দাস বৈষ্ণব জানিয়েছেন, প্রাচীনকালে এই এলাকায় শ্মশান থাকার কারণেই কালীর নাম হয়েছে শ্মশানকালী। কয়েক শতাব্দী প্রাচীন আগে কোন এক সময় এই মাকে তাদের পরিবারের কোন এক সদস্য কামাখ্যা থেকে নিয়ে এসেছিলেন। তারপর থেকে বংশপরম্পরায় তারাই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন। এই শ্মশানে কালী একসময় ছোট আকারের হলেও মায়ের স্বপ্নাদেশে বড় মূর্তি করা হয়।

দুবরাজপুরের এই শ্মশানকালীর ভোগের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষত্ব। ভোগ হিসেবে থাকে খিচুড়ি, মাছের টক আবার কখনো ভাত বা মাংস। এখানে মায়ের প্রতিমার পাশে থাকেন মায়ের দুই সঙ্গী ডাকিনী ও যোগিনী।

কালীপুজোর রাতে পুজোর রীতি অন্যান্য সমস্ত অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পুজোর সময় পুরোহিতকে কাঁটার আসনে বসতে হয়। পাশাপাশি পুজো হয় নির্জনে। এই পুজো দেখার অনুমতি নেই কারোর। ভক্তদের বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেওয়া হয়। সমস্ত লাইট নিভিয়ে অন্ধকার ঘরে শুধুমাত্র দুটি প্রদীপ জ্বেলে পুজো করা হয় শ্মশানে মাকে। পুজো হয় তন্ত্র মতে, যেখানে লাগে চ্যাং মাছ পোড়া, ছাগ বলি হয়। এই পুজোর দায়িত্ব এলাকার ওই বৈষ্ণব পরিবারের। তবে বিসর্জনের দায়িত্বে থাকেন এলাকার দাস পরিবারের সদস্যরা।