রাজ্য সরকারের একের পর এক উদ্যোগে উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর এবার শহরে সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মাঠে নামলো প্রশাসন।একইসাথে শহরকে বেআইনি নির্মাণের আখড়া হিসেবে বন্ধ করতেও তৎপর রাজ্য সরকার। কলকাতা শহরে বন্ধের মুখে ৮০ টিরও বেশি রুফটপ রেস্তরাঁ। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভাকে সেই লম্বা নামের তালিকা পাঠিয়েছে কলকাতা পুলিশ। তারপরই শহরে রুফটপ বার-রেস্তরাঁ-ক্যাফে বন্ধের নোটিস জারি করা হয়েছে।
পুরসভার তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বার, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে গুলি বন্ধ না করলে সেগুলি ভেঙে গুরিয়ে ফেলা হবে। জেনে নিন আপনার সাধের কলকাতা শহরে কোন কোন বার, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে গুলির নাম বাদের খাতায় চলে গেলো। তালিকার প্রথমেই নাম রয়েছে ব্যয়বহুল পার্ক স্ট্রিট এলাকার সাতটি রুফটপ বার-রেস্তরাঁর। বাদের খাতায় যাচ্ছে দ্য স্কাই স্টোরি, রুটস, অরিস, দ্য গোল্ডেন পার্ক, ড্রাঙ্কেন টেডি, স্ক্র্যাপ ইয়ার্ড, এলএমএনওকিউ-এর রুফটপ চত্বর।
আরও পড়ুন: দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান! এবার নমো ভারত দাপিয়ে বেড়াবে হাওড়া-মালদা রুটে
দ্বিতীয়ত, শেক্সপিয়র থানা এলাকার ৮টি রুফটপ বার-রেস্তরাঁ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।হ্যাশট্যাগ, সোল, অলটেরা, দ্য অ্যাসটোর, পার্ক স্ট্রিট সোশাল, কিউ এআই কিউ এআই, দ্য লর্ডস অ্যান্ড ব্যারনস, ইটিং হাউস কাম রেস্তরাঁ-র রুফটপের নাম রয়েছে পুলিশের দেওয়া তালিকায়। তৃতীয়ত, বন্ধের মুখে ভবানীপুর থানা এলাকার তিনটি রুফটপ বার-রেস্তরাঁও। ক্লাউড ট্যাভেরন, ক্লাব কলকাতা মিক্সটেপ, রোমানিয়া কানহা কনফেকশনারির রুফটপ গুলির নাম রয়েছে তালিকায়।
চতুর্থত, পুলিশের তালিকায় নাম রয়েছে টালিগঞ্জের থানা এলাকার দুটি রেস্তোরাঁ। একটি হল নমনস ইন, অপরটি হল ক্য়ালোরি এইচআইসি-র রুফটপ। পঞ্চমত, যেহেতু গোটা কলকাতা শহরের ছাদ রেস্তোরাঁর ওপর কোপ পড়েছে তাই সেই তালিকা থেকে বাদ যায়নি নিউ আলিপুরের জায়কা, চেতলার রুফটপ, বেলেঘাটার কিচেন কিউ স্পেশালিটি, ট্যাংরার কলকাতা ৪৬, বড়বাজারের মিস অলিভ, গিরীশ পার্কের ক্যাফে সিক্সটিনথ এয়ার কাসা, হেয়ার স্ট্রিটের মাইট কুইনস বার, নিউ মার্কেটের ব্লু অ্যান্ড বেয়ন্ড, আনন্দপুরের মনজিলাত, প্রগতি ময়দানের লা ফেলিস, যাদবপুরের স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডের রুফটপও।
ষষ্ঠত, কলকাতা পুলিশের তালিকায় নাম রয়েছে গরফার স্টেমিন মাগস, জাফরান বার, স্পাইস অফ জয়। অন্যদিকে নেতাজি নগরে অবস্থিত আফটার নাইন বার, টি কে কে রেস্তরাঁ, রাজ রেস্তরাঁও বাদের খাতায় যাচ্ছে। সপ্তমত, কসবা থানা এলাকায় বড় থাবা বসিয়েছে কলকাতা পুলিশ। কারণ সেখানে সব মিলিয়ে মোট ১০টি রুফটপ বার-ক্যাফে-রেস্তরাঁ বন্ধেরc সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভিভান্ত, সিংজি ধাবা, লা ফ্লেম, এইচ টু ও নভলিটি অফ ৩৮৭, চিনি কম, মিস চিলিস (১৮৫৮, রাজডাঙ্গা মেন রোড), মিস সেন হোটেলস, এশিয়া কিচেন (১৮৫/১ রাজডাঙ্গা মেন রোড), হপ্পিপোলা (১৮৫বি, রাজডাঙ্গা মেন রোড), জারা এর রুফটপ গুলিতে আর ভিড় হবেনা সাধারণ মানুষের।
অষ্টমত, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকাতা শহরের আরও একাধিক জায়গার রুফটপ রেস্তোরাঁর অংশ। তাই নাম রয়েছে বেহালার দুটি-ফ্রিকশন ক্যাফে, হোটেল রয়্যাল হাইট, পর্নশ্রীর তিনটি, বেনিয়াপুকুরের দুটি, তোপসিয়ার তিনটি, বালিগঞ্জের পাঁচটি, গড়িয়াহাটের তিনটি, তিনজলার একটি রুফটপ এর অংশ। অপরদিকে, বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে লেক থানার একটি, কড়েয়ার ৫টি, রবীন্দ্র সরোবরের ৬টি, এনপিপিএসের একটি, ওয়াটগঞ্জের দুটি এবং রাজাবাগানের একটি রুফটপ রেস্তোরাঁকে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বড়বাজারের মেছুয়ার হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২ শিশু সহ মোট ১৪ জন মানুষের। এরপরেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ঘটনার দিন গড়াতে না গড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে কড়া বার্তা দেওয়া হয় যে শহরের কোনও ছাদ আটকে রেখে ব্যবসা করা যাবেনা। শুক্রবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এর মুখেও শোনা যায় সেই একই কথা ছাদ, সিঁড়ি আটকে রেখে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। এরপরেই পুর কমিশনার এর তরফে সার্কুলার জারি করা হয়।
তারপর ২৪ ঘন্টা পার হতে না হতেই পুর বিল্ডিং ও থানাগুলি মিলিত হয়ে পুরো শহরে অভিযান চালায়। তাতেই মোট ৮৩টি বহুতলকে চিহ্নিত করেছেন তারা। শহরের বুকে যে রেস্তোরাঁ গুলিতে ছাদে টিনের শেড থার্মোকলের ছাউনির মধ্যে এসি লাগিয়ে রেস্তোঁরা বার চালানো হত। যা দীর্ঘ দিনের গল্প। আবার ছাদে ওঠার সিঁড়িতে কোথাও বা দেখা গিয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার তো কোথাও বা জলের জার। তাছাড়া জড়ো করা প্লাস্টিক। তাই এই সব জায়গায় আগুন লাগলে বিপদ কম হবে না বৈকি। তাই এবার ছাদ রেস্তরাঁ, বার, ক্যাফেগুলি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হল।