চিনপাই সিদ্ধেশ্বরী মা, বিগত বছরের স্মৃতি কাটিয়ে ধুমধামে স্বমহিমায়

গৌড় চক্রবর্তী : বাংলায় কালীপুজোর গুনতি করতে গেলে হিমশিম খেতে হবে যে কাউকেই। তবে এসকল পুজোর মধ্যে সমাজে বছরের পর বছর ধরে দাগ কেটেছে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুজো। সেসব পুজোর মতই সদাইপুর থানার চিনপাই গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী মা।দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হলেও চিনপাইবাসীর কাছে বরাবরই আলাদা সিদ্ধেশ্বরী মা।

এখানকার বহু প্রাচীন দুটি কালী মন্দিরে শতাব্দী প্রাচীন সিদ্ধেশ্বরী কালী রয়েছে। কথিত আছে, এই দুই মা খুবই জাগ্রত। গ্রামবাসীর কাছে যা বড়মা এবং ছোট মা নামেই পূজিত হন। পুজো দুটিই একসময় পারিবারিক হলেও বর্তমানে সার্বজনীনে পরিণত হয়েছে। আর তাই এই দুই মায়ের পূজোকে ঘিরে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে তৈরি হয়েছে উৎসবের আবহ। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই নিকট আত্মীয়স্বজনের কোলাহল, দীপাবলী উদযাপন, চারিদিকে আলোর রোশনায় যেন সমগ্র গ্রামের পরিবেশকে নিয়ে গেছে অন্য এক মায়াবী জগতে।

কিন্তু পুজোর বিগত দুই বছরের দিকে ফিরে তাকালে অতীতটা বেশ কঠোর ছিল। ২০১৭ সালে পুজো পরিচালনা করে স্থানীয় যে ক্লাব সেই ক্লাবের সদস্য বাবলু রায়ের অকালমৃত্যু পুজোর আনন্দকেই কেড়ে নিয়েছিল। অপরদিকে গতবছর পুজোর রাতের ঘটনা আমাদের সকলেরই জানা। পুজোর পরের দিন অর্থাৎ ৭ই নভেম্বর রাতে দুই মায়ের প্রায় সব গহনায় চুরি গেছিল। একই সময় ও একই সাথে সেদিন দুই মায়ের অলংকার চুরিতে শান্ত গ্রামে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠেছিল, ক্ষেপে উঠেছিল গ্রামের মানুষ, হয়েছিল পুলিশের ওপর বিক্ষোভ, জাতীয় সড়ক অবরোধ।

তবে বীরভূমের পুলিশ প্রশাসনও হতবাক হয়ে গেছিল গ্রামের মানুষের মায়ের প্রতি সেদিনের ভক্তি ও বিশ্বাস দেখে। গ্রামের মানুষের আবেগের মর্যাদা দিয়ে চুরির কিনারা করতে বাদ যায়নি পুলিশ কুকুর থেকে সিআইডি তদন্ত। অবশেষে ঘটনার দুইমাস পর বেদে সম্প্রদায়ের একটি দলকে ধরে উদ্ধার করা গেছিল গহনার কিছুটা। তবে প্রায় বেশিরভাগই ছিল গলানো। আর এরপর যাতে আর এরকম অনভিপ্রেত ঘটনা আর না ঘটে তারজন্য এ বছর আগেভাগেই সতর্ক গ্রামবাসী, ক্লাব থেকে পুলিশ প্রশাসন। তাই এবছর পুজোকে ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে সমগ্র মন্দির প্রাঙ্গণ।

এমনিতেই গতবছরের ঘটনার পর মন্দিরে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। তবে পুজোর ক’দিন নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে বাড়ানো হয়েছে সিসিটিভির সংখ্যা। দুই মন্দির প্রাঙ্গণ ছাড়াও মেলা, বিশ্রামতলা সহ প্রায় সব এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্য পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার ও সিভিল ড্রেসে নজরদারির টিম। মন্দিরের সামনেই রয়েছে সদাইপুর থানার অস্থায়ী ক্যাম্প। কোথাও কারো কোন সন্দেহভাজন গতিবিধি লক্ষ্য করলে তখনই পুলিশকে জানাতে কিম্বা আটক করতে বলা হয়েছে। এদিকে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সজাগ পুজো পরিচালন কমিটি থেকে স্থানীয় ক্লাব নবারুণ সংঘের সদস্যরাও। ক্লাবের প্রায় সক্রিয় শ’তিনেক সদস্যকে এই পুজোর তিনদিন তিন শিফটে ডিউটি সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ক্লাবের সদস্য সুদীপ্ত মুখার্জী, সভাপতি শিবু বাগ্দীর স্পষ্ট জবাব, “গতবছর থেকে শিক্ষা নিয়েই পুজোর দিনগুলোতে এক মুহূর্তও আর মা’কে ছেড়ে কোথাও যাব না। তবে প্রশাসনের প্রতি অবিশ্বাস নয় বরং প্রশাসনের সাথে সহায়তা করে আমরাও প্রতিক্ষণ এখানেই অর্থাৎ মন্দির প্রাঙ্গণেই থাকবো।”