নিজের হাতে বোনের বিয়ে দেওয়া হলো না বাড়ির একমাত্র রোজগেরে রাজেশের

হিমাদ্রি মণ্ডল : গত সোমবার পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীন সেনা সংঘর্ষে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর বীর জাওয়ান বীরভূমের মহঃবাজারের বেলগড়িয়া গ্রামের রাজেশ ওরাং শহীদ হন। লকডাউন না চললে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। এছাড়াও কথা ছিল লকডাউন উঠে যাওয়ার পরেই নিশ্চিত বাড়ি ফিরছেন বলে। কিন্তু জীবিত অবস্থায় তা আর হলো না, শেষ বার বাড়ি ফেরা হয়েছিল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। আর সে ফিরতে চলেছে কফিনবন্দি হয়ে।

জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে না পারার পাশাপাশি বেশকিছু স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল এই বীর সেনা জাওয়ানের। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলে ছিল রাজেশ। মাটির বাড়ি, টিনের চালের নিচে সুখের পরিবার, পরিবারে বাবা-মা ছাড়াও রয়েছে দুই বোন। এক বোনের বিয়ে হয়েছে আগেই, আর স্বপ্ন ছিল ছোট বোনের নিজের হাতে বিয়ে দেওয়ার। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।

মঙ্গলবার সন্ধায় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে ফোন করে জানানো হয়, রাজেশ ওরাং চিনা সেনাবাহিনীর সাথে লড়াইয়ে আহত হয়ে আর্মি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরেই ফোন আসে রাজেশ ওরাং আর নেই, তিনি শহীদ হয়েছেন। আর এই খবরেই সব ওলট পালট হয়ে যায়। চাষাবাদের কাজ করা বাবা দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। আর এই খবর পেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন মা। তবু তাসত্ত্বেও বাবা সুভাষ ওরাং ও মা মমতা ওরাং এমন ঘটনার জন্য বদলা নেওয়ার দাবি করেছেন ভারত সরকারের কাছে। পাশাপাশি তারা গর্বিত তাদের সন্তান দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ায়।

রাজেশ ওরাংয়ের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই অদম্য ইচ্ছা ছিল বলে জানান পরিবারের লোকজন।যে কারণে ছোট থেকেই সেই ইচ্ছাকে পূরণ করতে শরীর চর্চা থেকে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল সে। রাজেশ খুব ভালো স্পোর্টসম্যান ছিল। এরপর সিউড়িতে কলেজে পড়ার সময় সেনাবাহিনীতে নিয়োগের খবর পেয়ে সে ছুটে যায়। সেবার সিউড়িতেই মাঠ হয়েছিল সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য। আর সেই পরীক্ষায় সে সফল হয়ে ২০১৫ সালে একজন ভারতীয় জওয়ান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।

ভারতীয় সেনা জওয়ান হিসাবে নিজেকে নিয়োগ করার পর থেকেই তার পোস্টিং ছিল জম্মুতে। তারপর গত দু’বছর আগে তার পোস্টিং হয় লাদাখে। চাকরি করার পর পরিবারের কথা মাথায় রেখে গ্রামেই একটি নতুন বাড়ি তৈরি করে সে। তবে সেই বাড়ির কাজ এখনো অসম্পূর্ণ। লকডাউনের পর বাড়ি ফিরে সেই কাজ সম্পূর্ণ করার পাশাপাশি নিজের হাতে বোনের বিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনাও ছিল। কিন্তু এই সকল স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল রাজেশের।