সামনে এলো টলিউডের কুরুচিকর সত্য, প্রযোজকের কু-প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন অভিনেত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন : সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকেই দেশজুড়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে খেলার দুনিয়া, সব জায়গাতেই স্বজনপোষণ নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই। কঙ্গনা থেকে আয়ুষ্মান, বলিউডের অনেক তারকা তো আছেই পাশাপাশি বাদ পড়েনি বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি টলিউডও। শ্রীলেখা মিত্র প্রথম এনিয়ে সরব হন, তারপর তার পক্ষ নিয়ে মুখ খুলতে দেখা যায় তথাগত মুখোপাধ্যায়কে। আর এবার টলিউডের নোংরা, কুরুচিকর কতকগুলি দিক নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত। সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে তিনি কলম ধরে জানিয়েছেন, টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ২২ বছরের অভিজ্ঞতার কথা।

তাঁর কথায় এমন পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকলে নিজেকে অপরাধী মনে হতো। তাই থাকতে না পেরে অগত্যা মুখ খুললেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি অনেকের মুখ থেকেই শুনছেন যে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে নেপটিসম নেই, কিন্তু তিনি বলেন এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা!ইন্ডাস্ট্রিকে আড়াল করার জন্য মিথ্যে বলছে লোকজন। তিনি যে শুধু নেপোতিসমের মুখোমুখি হয়েছেন তা নয় বরং মাফিয়ার রাজও চাক্ষুষ করেছেন বলে অভিযোগ দেবলীনার।

প্রযোজক একা দেখা করতে চান!

কেরিয়ারের প্রথমদিকের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, যখন তিনি বছর ২২ আগে দ্বিতীয় ধারাবাহিকের অফার পান। তখন তাকে বলা হয় ধারাবাহিকের প্রযোজক তার সাথে দেখা করতে চান। সেই সময় তার মাও তার সাথে সেটে যেতেন। কিছুক্ষণ প্রযোজকের অফিসে অপেক্ষার পর প্রযোজক বলে পাঠান যে তিনি দেবলীনার সাথে একা দেখা করতে চান। ভেতরে যাওয়ার পর তিনি দেখতে পান প্রযোজকের টেবিলে রয়েছে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা! সেই সিসিটিভি দিয়ে প্রযোজক তাকে এবং তার মাকে দেখছিলেন।

কম্প্রোমাইজ

প্রযোজক দেবলীনাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি যখন এসেছেন তখন তিনি কম্প্রোমাইজ করতে রাজি কিনা। তাকে চমকে যেতে দেখে পরিচালক তাকে বোঝান যে কাজ ভালো হতে গেলে অভিনেত্রীর সাথে প্রযোজকের পারস্পরিক সখ্যতা ও বোঝাপড়া প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে বোঝাপড়া ভালো করতে হলে প্রযোজককে আলাদাভাবে সময় দেওয়া প্রয়োজন! প্রযোজক তাকে বলেন, চরিত্র, সংলাপ সবকিছু নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন। শুধু তাই নয় প্রযোজক নিজেই নেবেন তার জামার মাপ!

জামার মাপ!

প্রযোজক নিজে জামার মাপ নেওয়ার কথা শুনে না বলে দেন দেবলীনা।তার না শুনে প্রযোজক তার দিকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় যে এই মনোভাব নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি টিকতে পারবে না।

এই সমস্ত অভিযোগের পাশাপাশি দেবলীনা আরও লেখেন, ওই প্রযোজক সব অভিনেত্রীর সাথেই এরকম ব্যবহার করতেন এবং দর্জি প্রোডিউসার নামেই বিখ্যাত ছিলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে ‘ছিলেন’ শব্দটি ব্যবহার করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন সেই প্রযোজককে কেউ চেনেনা।

এছাড়াও দেবলীনা তার আরও এক জুনিওর বান্ধবীর অভিজ্ঞতার কথা বলেন। নামকরা এক পরিচালক নতুন মুখ নির্বাচন করলে ছবি শুরুর আগে ওয়ার্কশপ করিয়ে নেন। এমনই এক ওয়ার্কশপে যান তার এক বান্ধবী। সেখানে যাওয়ার পর পরিচালক তার বান্ধবীকে বলেন, ধরে নাও আমি একটা গাছ, এ বার তোমরা আলাদা করে আমায় ক্রিপার হয়ে দেখাও। দেবলীনার বান্ধবী আপত্তি জানালে তার কাছ থেকে ভালো চরিত্র চলে যায় আর যারা এই কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন তারা সেই সুযোগ পান।

পরিচালকদের সাথে চুমুর দৃশ্য অভ্যাস করলে কাজ পাকা

দেবলীনার কথা অনুযায়ী, দেবলীনার এক বান্ধবী প্রথম ছবির জন্য ওয়ার্কশপে গিয়েছিলেন তখন সেখানে একটি চুম্বন দৃশ্যের অভিনয় করতে হতো। সেই অভ্যাস করাকালীন পরিচালক কাছে চলে এসে বলেন, “এ বার তা হলে চুমুটা খাই?” বান্ধবীর আপত্তিতে চুমুও খাওয়া হয়নি এবং বান্ধবীর কাজও পাওয়া হয়নি। তখন যে মেয়ে বলবে, হ্যাঁ, চুমুটা আমি খেতে পারি সে নেক্সাসে ঢুকে যায়। তার একের পর ছবির কাজ আসে। আসলে সিস্টেমটা এরকমই বলে অভিযোগ করেন দেবলীনা। অনেক অভিনেত্রী নিজে থেকেই বলেন তারা পরিচালকের সাথে চুমুর দৃশ্যের অভ্যাস করতে চান। সবাই মিলে যদি এই সব ক্ষেত্রে না বলতো তা হলে এরকম নোংরামি কাজ বন্ধ হত বলেই দাবি করেছেন দেবলীনা।

অভিনেতাকে পরিচালকের বাজার করে দিতে হয়

দেবলীনা এনিয়ে আরও বলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি একজন অভিনেতা তাঁকে এক জন নামকরা পরিচালক প্রমোট করেন। শুধু তাঁর ছবি নয়, তাঁর থেকেও বড় পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করান। তাই অনেক অভিনেতা সারাক্ষণ পরিচালকের পেছন পেছন ঘোড়ে। তাঁর ব্যাগ বয়ে দেয়, বাজার করে দেয়। আমরা পার্সোনাল অ্যাটেন্ড্যান্ট দিয়ে যা করাই অভিনেতা সেই কাজটাই করে দেয়। সে নিঃসন্দেহে ভাল অভিনেতা, কিন্তু তার মতো আরও দশটা ভাল অভিনেতা আছে। শুধু অভিনেতা নয়, পরিচালকও এক কাজ করে। প্রযোজকের অফিসে বসেই থাকে। আর নায়িকাদের কথা তো বাদই দিলাম। তারা এন্টারটেন না করলে তো কিছুই হবে না। ওরা জানে আমি পারবো না তাই ওরা আমায় ডাকেও না।

দেবলীনা বারবার অভিযোগ করেন, তাঁর কাছ থেকে কাজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বদলে ছবিতে নেওয়া হয়েছে কথা বলতে না পারা কোনো স্টারকিডকে। কস্টিউমের মাপ নেওয়া হয়ে যাওয়ার পরও চলে গেছে ছবি। তিনি আরও দাবী করেন, ইন্ডাস্ট্রির ৯৯% একরকম হলেও ব্যতিক্রম ১% আছে বলেই দেবলীনা দত্ত বেঁচে আছেন। তিনি বলেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকতে গেলে সাধারণ ভাবে ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞেস করলে হবে না বরং ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলতে হবে ‘হ্যালোউ’! হ্যালো-র মধ্যেও ইঙ্গিত থাকে। চাকচিক্যময় পোশাক পরতে হবে।কিন্তু তার পরেও যারা তাকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত।