সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে উঠে আসছে ৮টি প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদন : বলিউডে আমরা ১৩ থেকে ১৪ জন তারকাকে দেখেছি যাদের মৃত্যু রহস্য এখনো উদঘাটিত হয়নি। যাদের মধ্যে রয়েছেন সদ্য মৃত উঠতি তারকা সুশান্ত সিং রাজপুত। বর্তমানে তার মৃত্যুই সবচেয়ে বড় রহস্যমন্ডিত। তিনি কি সুইসাইড করেছিলেন নাকি রয়েছে অন্য কোনও কারণ? গোটা দেশ থেকে আওয়াজ উঠছে সুশান্তের মৃত্যুর তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার। অবশ্য মুম্বই পুলিশের তরফে আবেদন করা হয়েছে, তাঁদের উপর যেন ভরসা করা হয়।

মুম্বই পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে এখনও পর্যন্ত ২৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছেন পরিচালক শেখর কাপুর। তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। সুশান্তের শেষ সিনেমা ‘দিল বেচারা’র অভিনেতার সহকর্মী সঞ্জনা সঙ্ঘীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

তদন্তের শুরুর দিকেই মুম্বই পুলিশ জানিয়েছিল, ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন অভিনেতা। জেরা করা হয়েছে তাঁর চিকিৎসক ও প্রেমিকাকেও। পুলিশ জানিয়েছেন, পরিচালক শেখর কাপুরের বয়ানও রেকর্ড করা হবে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির হালহাকিকত বোঝার জন্যে।

তবে এই পরিস্থিতিতেও বারবার মুম্বই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন তুলছেন সুশান্ত অনুরাগীরা। তাদের অভিযোগ তদন্তে গড়িমসি, তথ্য গোপন ইত্যাদি। বাধ্য হয়ে দিন কয়েক আগেই মুম্বইয়ের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অভিষেক ত্রিমুখী বলেন, ”দয়া করে আপনারা আমাদের উপর ভরসা রাখুন। আমরা অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে এই তদন্তের দায়ভার সামলাচ্ছি। সময় মতো আপনাদের সব তথ্য দেবে আমরা। সুশান্তের মৃত্যু রহস্যের যাবতীয় সত্যতা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে।”

তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার পর থেকেই উঠে আসছে বিভিন্ন প্রশ্ন। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে সত্যিই কি সুইসাইড করেছিলেন তিনি নাকি এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ঘটনা? আর এমন সন্দেহ প্রকাশ থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সুশান্ত অনুরাগীদের থেকে উঠে আসছে নানান প্রশ্ন।

সুশান্ত সিং রাজপুত মৃত্যুর পরই তার মৃতদেহের ফোটো ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ফটোর ভিত্তিতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ উঠছে যে, কোনও ব্যক্তি যদি গলায় ফাঁস লাগিয়ে সুইসাইড করেন সেক্ষেত্রে তার গলায় যেরকম দাগ থাকার কথা সেইরকম দাগ সুশান্তের গলায় দেখা যায়নি। বরং সুশান্তের গলায় গোল দাগ দেখা গেছে যা সাধারণত যদি কেউ জোর করে পিছন দিক থেকে গলায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে হয়। শুধু তাই নয় তার গলায় যে দাগটি ছিল তা থায়রয়েড কর্টিলেজের নীচে ছিল কিন্তু কেউ যদি নিজেই ঝুলে সুইসাইড করেন সেক্ষেত্রে সেই দাগটি অনেকটা উপরের দিকে থাকে। যখন কেউ নিজেই নিজেকে ফাঁসি দিয়ে সুইসাইড করেন সেক্ষেত্রে তার চোখ অনেক বড় বড় হয়ে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে কিন্তু সুশান্তের চোখ বন্ধ ছিল!

সুশান্ত কোনোভাবেই বাঁ হাতি ছিলেন না কিন্তু যে বস্তুটির দ্বারা তিনি ফাঁস লাগিয়েছিলেন সেই বস্তুটিতে তার বাঁ হাতের তিনটি আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে একটাই সম্ভাবনা তৈরি হয় যে যখন সেই ব্যক্তি তাকে পেছন দিক দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করার চেষ্টা করছিল তখন তিনি বাঁ হাত দিয়ে সেটিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। এক্ষেত্রে সম্ভব সেই ব্যক্তি তার ডান হাত চেপে রেখেছিলেন। কারণ যিনি বাঁ হাতি নন তার পক্ষে কোনোভাবেই বা হাত ব্যবহার করে ফাঁসি দেওয়া সম্ভব নয়।

একজন তারকার বাড়ির ডুপ্লিকেট চাবি হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও এক্ষেত্রে উঠে আসছে। কারণ একজন তারকা যখন বাড়ি থাকেন না কাজের সূত্রে, তখন পরিচারক পরিচারিকারা নিশ্চই সেই চাবি ব্যবহার করেই তার ঘর গুছিয়ে দিতেন! এক্ষেত্রে উঠে আসছে আরেকটা প্রশ্ন, তালা ভাঙার জন্য লোক ডেকে আনা শুধুমাত্র সেইজন্যই ছিলনা তো যাতে এটা প্রমাণ হতে পারে যে বাইরে থেকে আসা সেই ব্যক্তিই প্রথম তাকে দেখেছিলেন! এবং আগের থেকেই জানা ছিল যে তিনি মৃত?

যেদিন তার মৃত্যু হয়েছিল সেইদিন সব চ্যানেলে সুশান্তের মৃত্যুর সাথে তার ম্যানেজারের মৃত্যুর বিষয়টি যুক্ত করে দেখা হচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ করে সব চ্যানেল সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বন্ধ করে দেয় এবং সম্পূর্ণ বিষয়টি নেপটিসমের দিকে ঘুরে যায়! তাহলে কি সংবাদমাধ্যমগুলিকে কোনো চাপ দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হলো? প্রশ্ন সুশান্ত অনুরাগীদের।

কিছু সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট অনুযায়ী তিনি এবং তার সেক্রেটারি কয়েক মাস আগে কিছু টাকা ইনভেস্ট করে একটি ওয়েব সিরিজের কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন যে বলিউডে অনেক ছবি তার হাত থেকে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। সেই জন্যই তিনি ওয়েব সিরিজে টাকা ইনভেস্ট করেন। এরকম আশাবাদী মানসিকতার মানুষ কি সত্যিই সুইসাইড করতে পারেন? সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠছে প্রশ্ন।

ভায়সেরা রিপোর্ট নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। তার মৃত্যুর পর বলা হয় তার দেহ ময়নাতদন্ত এবং ভায়সেরা টেস্ট দুটির জন্যই দেওয়া পাঠানো হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুধু ময়নাতদন্ত রিপোর্টই সামনে এসে এবং সেখানে মৃত্যুর কারণ হিসেবে শ্বাস রোধের কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু কেউ যদি জোর করে তার শ্বাস রোধ করেন সেক্ষেত্রেও কিন্তু সেটা সম্ভব, মৃত্যুর সময় এখনও অজানা। কিছু কি লুকোনোর চেষ্টা চলছে?

তার মৃত্যুর আগেরদিন রাতে তার কমপ্লেক্সের সব সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যায়। পরিচারিকা বলেন যে তিনি একটি জুসের গ্লাস নিয়ে সুশান্তের ঘরে যান, গ্লাসটি কোথায়?

সুশান্তের বাবা জানান যে, তার ছেলে কোনরকম ডিপ্রেশনের ওষুধ খাচ্ছে বলে তিনি জানতেন না এবং অন্যদিকে সুশান্তের ম্যানেজার বলেন সুইসাইডের বেশ অনেক সপ্তাহ আগে থেকেই তিনি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে চোখের সামনেই ওষুধ পায় পুলিশ। অনেকদিন আগে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া ওষুধ কি চোখের সামনে রাখা থাকা স্বাভাবিক?