নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতীয় মহাকাশ গবেষণাগার ইসরো (ISRO) চাঁদে যে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan 3) পাঠায় তা ইতিমধ্যেই নতুন নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। ল্যান্ডার বিক্রম (Lander Vikram) এবং রোভার প্রজ্ঞান (Rover Pragyan) যেভাবে গবেষণা চালিয়েছে তা সত্যিই অতুলনীয়। এখন তারা চাঁদের মাটিতে ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে এবং ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় জেগে ওঠার আশা যোগাচ্ছে। তবে তারা ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের হাতে যে সকল তথ্য তুলে দিয়েছে তা গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আবার তাদের বিভিন্ন আবিষ্কারের মধ্যে চারটি আবিষ্কার যা রীতিমতো ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের।
১) বিক্রমের মধ্যে থাকা একটি পেলোড চাঁদের তাপমাত্রার পরিমাপ করেছে। চাঁদের তাপমাত্রা পরিমাপ করার পাশাপাশি ওই পেলোড চাঁদের আয়োনোস্ফিয়ারের ঘনত্ব পরিমাপ করেছে। এরই মধ্যে একটি বিরল তথ্য উঠে এসেছে আর তা হল চন্দ্রপৃষ্ঠকে ঘিরে থাকা বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত প্লাজমার ১০০ কিলোমিটার পুরু স্তরে আয়ন ও ইলেকট্রনের মিশ্রণ। এটি তুলনামূলকভাবে বিরল। প্লাজমার প্রাথমিক পরিমাপ প্রতি ঘন মিটারে প্রায় ৫ মিলিয়ন থেকে ৩০ মিলিয়ন ইলেকট্রনের ঘনত্ব নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে চাঁদে দিনের সময় এই ঘনত্ব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই ঘনত্ব প্রতি ঘন মিটারে এক মিলিয়ন। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যদি চাঁদে মানুষ বসবাস করে তাহলে এই আয়োনোস্ফিয়ারের ঘনত্ব কাজে লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। আয়োনোস্ফিয়ারে ইলেকট্রনের ঘনত্ব যত বেশি হবে তত রেডিও সংকেত যেতে বাধা পায়। ঘনত্ব কম হলে রেডিও সংকেত অনেক বেশি সুবিধাজনক হয়ে থাকে।
২) চাঁদে তাপমাত্রার পার্থক্য সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। কেননা চাঁদের উপরে ২ সেন্টিমিটার স্তরের নিচ থেকে থেকে ৮ সেন্টিমিটার নামলেই তাপমাত্রার পার্থক্য হয় ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও ধরা পড়েছে চাঁদে দিনে তাপমাত্রা কততে পৌঁছায় এবং রাতে তা কমতে কমতে কোন জায়গায় এসে দাঁড়ায়। দিনে তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ১২০° সেলসিয়াসে আর রাতে তাপমাত্রা নেমে তা পৌঁছায় মাইনাস -১৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবার চাঁদে মেরু এলাকায় যেসকল জায়গা রয়েছে সেখানে তাপমাত্রার পারদ রাতে নেমে দাঁড়ায় মাইনাস ২৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
৩) চন্দ্র কম্পন অর্থাৎ চাঁদে ভূমিকম্পের খবর দিয়েছে ল্যান্ডার বিক্রম। গত ২৬ আগস্ট এমন ঘটনার রেকর্ড করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। বিক্রমের সঙ্গে যে লুনার সিসমিক অ্যাক্টিভিটি পেলোড ছিল সেটি এই তথ্য রেকর্ড করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। এক্ষেত্রে ভূমিকম্পের যে রেকর্ড পাঠানো হয়েছে তা প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। চাঁদের মাটিতে ভূমিকম্প হয় তা আগেও জানা গিয়েছিল, কিন্তু এবার যে ধরনের রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে তা আরও ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। এছাড়াও চাঁদে ভূমিকম্প হওয়ার পিছনে ঠিক কি কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা। এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
৪) চন্দ্রযান-৩ মিশনের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো চাঁদের মাটিতে সালফারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। অন্যান্য উপাদানগুলির মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, ক্যালসিয়াম এবং লোহা মিলেছে। তবে সালফার হলো একটি গলিত শিলার উপাদান। এক্ষেত্রে গবেষকরা মনে করছেন, জন্ম লগ্নে চাঁদ গলিত শিলার একটি পুরু আস্তরণ দিয়ে আবৃত ছিল। চন্দ্রপৃষ্ঠে সালফারের উৎপত্তি গ্রহাণু থেকে হতে পারে। ধীরে ধীরে সেই সালফার ঠান্ডা হয় এবং চন্দ্রপৃষ্ঠে জমে যায়।