শারীরিক প্রতিবন্ধিকতাকে তুচ্ছ করে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে অনুদান পড়ুয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদন : মানুষের মন ও মানসিকতার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অনেক সময় আমরা যাদেরকে সুস্থ সবল ভাবি দেখা যায় তাদের মধ্যেই অনেক দুর্বল মানসিকতা বিকৃত মানসিকতা রয়েছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় যাদেরকে আমরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ বলে ভাবনা চিন্তা করি তাদের মধ্যেই রয়ে যায় অশিক্ষার কালো বীজ।

অন্তত করোনার এই পরিস্থিতিতে আমরা অনেকটা এরকমই কিছু শিক্ষা পেলাম।উচ্চ শিক্ষিত মানুষেরা যখন শরীরের ভেতর করোনার সংক্রমণ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তখন আদিবাসী একজন মহিলা শুধুমাত্র নিজেকে সংক্রমিত ভেবে সন্দেহের বশেই শেষ করে ফেলছেন, যাতে তার গোষ্ঠীর উপর কোনো মানুষ সংক্রামিত না হন। মানসিকতার ফারাক। শিক্ষা এখানেই হয়তো বোঝা যায়। একজন তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ যেখানে শুধুমাত্র নিজের কথা ভাবছেন! সেখানে একজন তথাকথিত অশিক্ষিত মানুষ ভাবছেন তার গোষ্ঠীর কথা, তার রাজ্যের কথা, তার দেশের কথা।

ঠিক সেই রকম ভাবেই করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমরা যাদের ক্ষেত্রে অনুদান পাওয়ার আশা করি দেখা যায় সেই সমস্ত ধনী মানুষেরা অনেক সময় এগিয়ে আসেন না! অথচ এগিয়ে আসেন সেই সমস্ত মানুষ যাদের আর্থিক পুঁজি খুবই কম। ঠিক যেমন গতকালই আমরা দেখেছি শিলিগুড়ির ভিক্ষুকেরা তাদের স্বল্প সঞ্চয় তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে। এই মানুষগুলো ঠিকমতো খেতেও পায় না কিন্তু ইনারা জানেন যে রাজ্য এবং দেশের সংকটে পাশে দাঁড়ানোটা একজন নাগরিক হিসেবে কর্তব্য! সত্যি করোনা অনেক কিছু শেখালো! আমরা আরও একবার অবাক হয়ে যায় যখন দেখি স্কলারশিপের টাকা থেকে শ্রীপর্ণা করোনা মোকাবিলায় সাহায্য করছে।

কে এই শ্রীপর্ণা নন্দী?

গতবছরই সে মাধ্যমিক পাশ করেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে! অবাক হচ্ছেন তো! আসলে ভালো করে বসতেও পারে না শ্রীপর্ণা। হাঁটাচলার ক্ষমতা তো নেই তার। শুয়ে শুয়ে কেটে যায় তার সময়। এই ভাবেই পড়াশোনা করেছে সে। শুধুমাত্র মনোবলকে সঙ্গী করেই সে পরীক্ষা দিয়েছে। পড়াশোনা শিখেছে। মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৫ শতাংশ নম্বর। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই মেয়েটি তারপর তার জীবনের লড়াই পাশে পেয়েছে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পড়াশোনা চালানোর জন্য ৬০০০ টাকা করে সে স্কলারশিপ পায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। আর এই স্কলারশিপের টাকা থেকেই সে এক হাজার টাকা তুলে দিল মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।

তার এই উদ্যোগ অনুপ্রেরণা যোগাবে অন্যান্যদের। শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েও মানসিকভাবে কিন্তু সে আমাদের অনেকের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে। আমরা যেগুলো ভাবতে পারিনা! সে সেটা ভাবতে পেরেছে। তাই দেশের এই চরম দুর্দিনে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। চালান গড়বেতা থানার সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে পাঠরতা শ্রীপর্ণার ভিডিওটি সামনে আসতেই মুহূর্তের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।

শ্রীপর্ণার এই অনুদান পেয়ে প্রশাসন খুবই খুশি। আমাদের উচিত আমাদের মানসিক প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে এভাবেই বিপদের দিনে সকলের পাশে দাঁড়ানো। আর কিছু নয় আমরা কি পারি না আমাদের চারপাশে যে মানুষগুলো না খেয়ে আছে তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে? আমরা কি পারিনা রাস্তায় যে কুকুরগুলো দিনের পর দিন না খেয়ে অনাহারে শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদেরকে দুটো খাবার দিতে!আমরা প্রত্যেকে চাইলেই এগুলো পারি। কিন্তু প্রত্যেকটা মুহূর্তে আমরা এটাই ভাবি যে আমি কেন! আমার বদলে আমার পাশের প্রতিবেশীও তো কাজটি করতে পারেন! করোনার এই বিপদসংকুল সময়ে চলুন আমরা প্রত্যেকে আমাদের মধ্যে থাকা যাবতীয় অক্ষমতাকে দূরে সরিয়ে গরীবমানুষ গুলোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিই। হাত বাড়িয়ে দিই অসহায় প্রাণীগুলোর দিকেও। চলুন আমরা প্রত্যেকেই একটু মানবিক হই নিজেদের স্বার্থে এই দেশের স্বার্থে! ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন।