ভারত জুড়ে ২০০-র বেশি মন্দির বানানো কিংবদন্তী শিল্পী বানাচ্ছেন রাম মন্দির

নিজস্ব প্রতিবেদন : দীর্ঘ কয়েক দশকের প্রতিক্ষার পর অবশেষে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ সম্পূর্ণ হল অযোধ্যার রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার ভূমি পুজো। কয়েক বছরের মধ্যেই সেখানে তৈরি হবে যাবে রাম মন্দির। এই মন্দির নির্মাণের দায়িত্বভার গিয়ে পড়েছে সম্পুরা পরিবারের হতে। নির্মাণ কাজের দায়ভার দেওয়া হয়েছে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো সংস্থাকে। এদিন মন্দির নির্মাণের রূপরেখা তৈরি করতে গিয়েছিলেন সম্পুরা পরিবারের প্রধান চন্দ্রকান্ত সম্পুরা।

সম্পুরা পরিবার দেশ জুড়ে ২০০টির বেশি মন্দিরের নির্মাণ করেছে। ৩ দশক আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৎকালীন সভাপতি অশোক সিংহলের সঙ্গে এদিন অযোধ্যায় গিয়েছিলেন ৭৭ বছর বয়সী চন্দ্রকান্ত। তার পিতামহ প্রভাশঙ্কর সম্পুরার হাত ধরে তৈরি হয়েছে গুজরাটের সোমনাথ মন্দির। ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ১৯৫১ সালে সেই মন্দির উদ্বোধন করেছিলেন। পরবর্তীকালে মন্দির নির্মাতা প্রভাশঙ্কর সম্পুরাকে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছিল। সম্পুরা পরিবারের চন্দ্রকান্ত বাবুর ভাই বন্দ্রিনাথ মন্দির নির্মাণের কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে সেই কাজের দেখাশোনার দ্বায়িত্বে থাকা কালীন তার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যরা মনে করেন তাদের মনের সবথেকে কাছে আছে সোমনাথ মন্দির নির্মাণের স্মৃতি।

এই পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস, তাদের পূর্বপুরুষেরা স্থাপত্যবিদ্যা শিখেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মার কাছ থেকে।এক্ষেত্রে চন্দ্রকান্ত বাবুর কথায়, তিনি নিজে কোনোদিন আলাদাভাবে স্থাপত্য বিদ্যা শেখেননি বরং তার সম্পূর্ণ জ্ঞান পূর্বপুরুষদের থেকে প্রাপ্ত। তবে তাঁর পুত্ররা এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা, স্থাপত্য শিল্পীরা এই বিষয়ে প্রশিক্ষিত। এছাড়াও তারা মনে করেন তারা চন্দ্রের অধিবাসী। কারণ সম অর্থাৎ চন্দ্র এবং পুরা অর্থাৎ শহর।

সেই সময় যখন তিনি রামমন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করেন তখন সেখানে কোনরকম যন্ত্র নিয়ে ঢোকার অনুমতি না থাকায় নিজের পায়ের পাতার মাপে ভেতরের অংশ মেপে তার ভিত্তিতে প্রাথমিক একটি স্কেচ তৈরি করেছিলেন। তারপর ট্রেসিং পেপারে সেই ছাপ তুলে তৈরি করা হয়েছিল নকশা। তবে এমনটা সোমনাথ মন্দিরের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল প্রভাশঙ্কর বাবুর সাথে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তার সাহায্য করেছিলেন তার পুত্র চন্দ্রকান্ত।

অন্যদিকে মথুরায় কৃষ্ণের জন্মস্থান নির্মাণে (১৯৯৩ খ্রি) চন্দ্রকান্তকে তার পুত্র আশীষ সাহায্য করেছিলেন। রাম মন্দির নকশা তৈরির ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ২৩টি নকশা তৈরি করেছিলেন তিনি। যার মধ্যে একটি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দ্বারা অনুমোদিত হয় এবং সেই অনুসারে মন্দির নির্মাণের ভাবনা এগোয়।সেই অনুযায়ী একটি কাঠের মডেল তৈরি করা হয় যা কুম্ভ মেলায় সাধু সন্তদের দ্বারা অনুমোদিত হয়।

পুরোনো কথা মনে করে তিনি বলেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও তাকে ডেকে পাঠান। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, মন্দির এবং মসজিদ উভয়কে রেখেই কোনো বিকল্প নকশা তিনি তৈরি করতে পারবেন কিনা। তারপর তিনি মসজিদের তিনটি ডোমকে একইরকম রেখে তার পাশে মন্দির স্থাপন করার নকশা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সেই বিষয় মত দেয়নি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তাদের বক্তব্য ছিল সঠিক স্থানে মন্দির তৈরি না হলে সেই মন্দিরের তাদের কাছে মন্দিরের কোনো গুরুত্ব নেই। সেটি সরযূর তীরে বা আমেদাবাদে হতে পারে।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর রামের জন্মস্থানে এই প্রকল্পের গতি বৃদ্ধি পায়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে তার কাজ সম্পূর্ণ গতিতে চলতে শুরু করে। কিন্তু সেই সময় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অর্থ কোষে টান সহ বিভিন্ন মামলার চাপ এসে পড়ায় কাজের গতি মন্থর হয়ে যায়। গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আবার গতি পায় নির্মাণ কাজ। এখন মন্দির নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছেন চন্দ্রকান্ত বাবুর পুত্র আশীষ এবং নিখিল। যাদের সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আরেক পুত্র আশুতোষ যোগ দিয়েছেন। মূলত পুত্র আশীষের ঘাড়েই এখন এই মন্দির নির্মাণের মূল দায়িত্ব। এর আগে তিনি মুম্বইয়ের আন্টিলায় আম্বানিদের ব্যক্তিগত মন্দির তৈরি করেছিলেন। এই কিংবদন্তি পরিবার অক্ষরধাম মন্দির ও লন্ডনের এই অক্ষর পুরুষোত্তম স্বামী নারায়ন মন্দির তৈরি করেছিলেন।