আমেরিকার হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে দেশকে পরমাণু শক্তি দিয়েছিলেন বাজপেয়ী

নিজস্ব প্রতিবেদন : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫২ বছরে পাঁচ-পাঁচটি বড় বড় যুদ্ধের সম্মুখীন হয়। এই পাঁচটি যুদ্ধের মধ্যে পাকিস্তানের সাথেই ভারতকে চারটি যুদ্ধে সম্মুখীন হতে হয়েছে। আর একবার সম্মুখীন হতে হয়েছে চীনের সামনে। গড় হিসাব করলে দেখা যাবে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রতি ১০ বছর অন্তর ভারতকে একটি করে যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধে জয়লাভের পর ২০ টা বছর কেটে গেলেও আর কোন দেশ ভারতের দিকে সেভাবে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করেনি। কিন্তু কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের আমলে। কারণ তখন থেকেই ভারতকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে শক্তিশালী করে তোলার একের পর এক আধুনিক পদক্ষেপ গ্রহণ হতে শুরু করে। অটলজীর আমলে দেশের সবথেকে বড় পদক্ষেপ বিশ্বের সাথে তালে তাল মিলিয়ে দেশকে পরমাণু শক্তিধর করে তোলা। আর ভারতকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সেসময় পদে পদে হুমকি দিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু সেসকল হুমকিকে তোয়াক্কা না করে অটলজী নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে দেশকে সেই শক্তি দেন।

সে সময় ভারত একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ হয়ে উঠুক তা কোনোভাবেই চায়নি আমেরিকা। তবে আমেরিকার চাওয়া আর না চাওয়াতে ভারতের কিছু এসে যায় নি। অটল বিহারি বাজপেয়ি সরকারে আসার পর থেকেই জয় জওয়ান, জয় কিষান ও জয় বিজ্ঞানের ধ্বনি তুলে ধরেছিল। আর তার প্রতিফলন হিসেবে অন্য কোন দেশের কোন রকম সহযোগিতা ছাড়াই ভারতীয় বিজ্ঞানীরা নিজেদের সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে পরমাণু প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হয়। ১৯৯৮ সালের ১১ই মে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের পরমাণু পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ি। আর সে সময় ভারতীয় এই বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে ছিলেন দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মিসাইল ম্যান এপিজে আবদুল কালাম। আর সে সময় ভারতীয়দের এই প্রয়াসকে নজরদারিতে রাখার জন্য আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা CIA স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। পাশাপাশি তারা DRDO-র ফোন কল থেকে শুরু করে এসমস্ত কিছু গতিবিধির উপর নজরদারি করতে শুরু করে। কিন্তু তাতে কোন লাভ করতে পারেনি আমেরিকা।

ধুরন্ধর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মিসাইল ম্যান এপিজে আব্দুল কালাম আমেরিকার চালবাজি আগেই বুঝতে পেরে ফোনে কথা বলার সময় পরমাণু অথবা এটমিক শব্দের কোন ব্যবহার করতেন না। বরং হোয়াইট হাউস, তাজমহল ইত্যাদি নানান ধরনের কঠিন শব্দ ব্যবহার করতেন। অন্যদিকে আমেরিকার স্যাটেলাইট যাতে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের ওপর গতিবিধি রাখতে না পারে তার জন্য ভারতীয় বিজ্ঞানীরা জওয়ানদের পোশাক পড়ে এবং রাতের অন্ধকারে কাজ করেছিলেন। এমনকি পরীক্ষার জন্য ব্যাঙ্গালোর থেকে পোখরান পর্যন্ত পরমাণু আমার ক্ষেত্রেও কাউকে কিছু টের না দেওয়ার জন্য বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সামান্য ট্রাকে করে। আর এই ভাবেই সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করে ভারত পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করে।