Sonagachi Director: সোনাগাছি এই জায়গার নাম মুখে নিতে অনেকেই ভয়ে পায় লোক সমাজে। অনেকে আবার কৌতূহলের বসে চুপিসারে ঢু মেরে আসে। এই সোনাগাছির ইতিহাস বেশ পুরোনো। আজকে এই সু শিক্ষিত সমাজের মানুষের মধ্যে যে গোড়া মানসিকতা রয়েছে তা এখনো মুছে যায়নি। সোনাগাছিতে যেসকল মানুষজন বসবাস করেন তাদের নিত্যজীবন আর বাকি পাঁচ জনের মত মোটেই সহজ নয়। আজও তারা সমাজের সবচেয়ে নীচু স্তরের মানুষ হিসেবে গন্য হোন। সামান্য সম্মানটুকু পায় না। শিক্ষার আলো থেকেও বঞ্চিত থাকে সেখানকার ছোট ছেলে মেয়েরা। প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে রোজ লড়াই করে চলতে হয় তাদের। এমনই এক ছেলের কথা আজ তুলে ধরবো এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
সোনাগাছির বুকে জন্ম তার। ছেলেটির নাম অভিজিৎ হালদার। সমস্ত কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আজ দুর্দান্ত পরিচালক হয়ে সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। কি তার পরিচয় জানেন? জানা ব্রিসকি ও রস কাউফম্যান একটি তথ্যচিত্র বা ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিলেন। তথ্যচিত্রটির ‘নাম বর্ন ইনটু ব্রথেলস’। ২০০৪ সাল নাগাদ মুক্তি পায় সেটি। এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে অভিজিৎ হালদার-সহ সোনাগাছিতে জন্মানো আট শিশুদের জীবন কাহিনি তুলে ধরা হয়েছিল। তথ্যচিত্রটি অস্কার জেতে ২০০৫ সালে। তথ্যচিত্রটি অংশ হিসাবে দেখা যায় পরিচালকরা অভিজিৎ সহ শিশুদের শেখান কীভাবে ছবি তুলতে হয় সমাজের। তথ্যচিত্রটিতে দেখা যায় শিশুরা তাদের আশপাশের এলাকার ছবি তুলছে। খেলে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক। এই আটজনের মধ্যে দর্শকের সব থেকে বেশি মুগ্ধ কেড়েছিলেন অভিজিৎ হালদার।
২০১০ সালে অভিজিৎ বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একটি জানিয়েছিলেন, সেই সময় তার জানা ছিল না কী হচ্ছে। তারা ভেবেছিলেন কোনও হিন্দি সিনেমার শুটিং হচ্ছে। তথ্যচিত্রটিতে দেখানো হয়েছিল তার বাবা একজন ড্রাগ অ্যাডিকটেড ব্যক্তি। তার মা ও খুব কম বয়সেই মারা যান। তথ্যচিত্রটি মুক্তির পর এই শিশুদের সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে ‘কিডস ওইথ ক্যামেরা’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাঁরা শিশুদের ফটোগ্রাফি শেখানোর পাশাপাশি তাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার ভাবনা নেন। সেই সময় অভিজিতের তোলা ফটো বেশ জনপ্রিয়তা পায় কলকাতা ও নিউইয়র্কে।
এরপর একবারে স্বপ্নের মতো পাল্টে যায় তার জীবন। জীবন উপভোগের আসল স্বাদ পেতে শুরু করেন তিনি। জানা গিয়েছে, আমস্টারডামের একটি ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন তিনি। ২০০৫ সালে নিজের চেষ্টায় তিনি আমেরিকার নিউ হ্যাম্পায়ার স্কুলে পড়ার জন্য আবেদন জানান। সেই সময়ও তার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ জোগায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ২০০৭ সালে অভিজিৎ হালদার পেশা হিসাবে সিনেমা পরিচালনাকেই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তার কথায় “সিনেমা পরিচলনা খুবই মজাদার”। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম স্টাডিজ এর পড়াশোনার সুযোগও পান তিনি।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন “নিজের অভিনীত তথ্যচিত্রটি প্রথমবার তিনি দেখেছিলেন ২০০৫ সালে। তখনই বুঝেছি সাধারণ মানুষ আমাদের গল্প জানতে চায়।” সমাজের সবচেয়ে নীচু স্তরের মানুষ হিসেবে গন্য হয়েও নিজের মনের জোর ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনি আজ সুপরিচিত। তিনি একটি সিনেমাও বানিয়েছেন। যার মধ্যে দেখানো হয়েছে নিষিদ্ধ পল্লী থেকে উঠে আসা এক মেয়ের প্রতিকূল পরিস্থিতির কাহিনী। তিনি বলেছেন, “ইস যদি নিউ ইয়র্কটাও কলকাতা হত। তাহলে আমিও হয়ত বাড়িতেই থাকতাম।