কত আসন পাবে বিজেপি তৃণমূল, কি বলছে আভ্যন্তরীণ সমীক্ষার রিপোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদন : আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট এখনো প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে নির্ঘণ্ট সামনে না এলেও শাসকদল হোক অথবা বিরোধীরা কেউই নির্বাচনের প্রচারে খামতি রাখতে চাইছে না। বিজেপির তরফ থেকে বাংলায় পদ্ম ফোটানোর জন্য একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতাদের পাঠানো হচ্ছে রাজ্যে। একইভাবে শাসকদলও রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে মিছিল-সভা করে চলেছে নিজেদের শাসনভার ধরে রাখতে।

মিছিল, সভা এসবের পাশাপাশি এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি ইতিমধ্যেই হিসাব কষতে শুরু করেছে আগামী বিধানসভায় তাদের বাংলায় কত আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই হিসাব কষার জন্য তারা আভ্যন্তরীণ সমীক্ষা করে চলেছে। আর এই সকল আভ্যন্তরীণ সমীক্ষার রিপোর্ট ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে সামনে এসেছে। তবে মনে রাখতে হবে এই সমীক্ষা কেবলমাত্র রাজনৈতিক দলগুলির নিজেদের আভ্যন্তরীণ সমীক্ষা। কোন সংবাদমাধ্যম এই সমীক্ষা করেনি।

গেরুয়া শিবিরের আভ্যন্তরীণ সমীক্ষার রিপোর্ট

নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক কাজকর্ম চালানোর জন্য গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে গোটা রাজ্যকে পাঁচটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এই জোনগুলি হল উত্তরবঙ্গ জোন, রাঢ়বঙ্গ জোন, মেদিনীপুর জোন, নবদ্বীপ জোন এবং কলকাতা জোন। আর এই পাঁচ জোনে বিজেপির আভ্যন্তরীন সমীক্ষায় যে রিপোর্ট উঠে এসেছে তাতে তারা মনে করছে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা ১৫০-১৬০ আসন পেতে পারে।

বিজেপির এই অভ্যান্তরীন সমীক্ষা অনুযায়ী তারা রাজ্যের সংখ্যা গরিষ্ঠতার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪ আসন সংখ্যা বিশিষ্ট বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগারের জন্য প্রয়োজন ১৪৮টি আসন। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বঙ্গ বিজেপিকে টার্গেট দিয়েছে ২০০। আর এই টার্গেটের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গ বিজেপির দাবি, ভোট আস্তে আস্তে তারা ২২০ তে নিজেদের জয়যাত্রা থামাবে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপির দখলে রয়েছে ১২১টি বিধানসভা। শুভেন্দু অধিকারী দিন কয়েক আগেই খড়দহতে দলীয় বৈঠকে বলেছেন, “বাকি আসনগুলি জয় করার লক্ষ্যেই তারা এগিয়ে চলেছে।”

শাসকদল তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ সমীক্ষার ফলাফল

নির্বাচনের আগে তৃণমূলের তরফ থেকে যে আভ্যন্তরীণ সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে তাতে তাদের দাবি, ২০১৬ এর তুলনায় তাদের আসন সংখ্যা কিছুটা কমবে। তবে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনরায় তারা সরকার গড়তে চলেছে। তাদের আভ্যন্তরীণ সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে আসন্ন বিধানসভায় ১৯০ থেকে ২১০টি আসন তারা তাদের ঝুলিতে ভরতে চলেছে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ১৬৪টি আসন। অর্থাৎ তৃণমূলের ম্যাজিক ফিগারের তুলনায় ১৬টি বেশি আসন রয়েছে। আর এই সকল হিসাব নিকাশ এবং বর্তমান সাংগঠনিক ও সরকারি প্রকল্পের নিরিখে তারা মনে করছে ১৯০ থেকে ২১০টি আসন পেতে চলেছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত

তবে তৃণমূল এবং বিজেপির আভ্যন্তরীণ সমীক্ষার রিপোর্ট কি আগামী বিধানসভায় বাস্তবায়িত হবে তা সময়ই উত্তর দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে তারা দাবি করেছেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর বঙ্গ রাজনীতিতে নানান সমীকরণ তৈরি হয়েছে।

ইতিমধ্যেই শাসক দল ছেড়ে একাধিক বিধায়ক, নেতা, এমনকি শুভেন্দু অধিকারীর মতো প্রভাবশালী মন্ত্রী গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। যার প্রভাব আগামী বিধানসভায় পড়বে তা অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যখন ১৮টি আসন দখল করে তারপরেই তৃণমূলের তরফ থেকে রাজনৈতিক কৌশলী হিসাবে নিযুক্ত করা হয় প্রশান্ত কিশোরকে। যে প্রশান্ত কিশোরও আবার দিন কয়েক আগে দাবি করেছেন, রাজ্যে বিজেপিকে দুই অঙ্কের সংখ্যা পেরোতে বেগ পেতে হবে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এটাও মনে করছেন, ভোট যত এগিয়ে আসবে ততই এরকম আভ্যন্তরীণ সমীক্ষার সামনে আসবে। তবে শেষমেষ ব্যালটের রায় কোন দিকে যাবে তা ঠিক করবেন রাজ্যের নাগরিকরাই।