সম্প্রতি রাজ্যের চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকাদের তরফে আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার কথা জানানো হয়েছে। সেই কথা মতো নিজ নিজ স্কুলে যোগ দিয়েছেন তারা। আবার যে বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল তাও সঠিক সময়ে এসে গিয়েছে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। স্বাভাবিকভাবেই তাতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে সরকারের। তবে এই শান্তির আবহেই যেন আবারও অশান্তির দিন ঘনিয়ে এলো।
এবার কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি পড়লো এসএসসি চেয়ারম্যানের দিকে। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চের তরফে এসএসসি চেয়ারম্যানকে এজলাস থেকে জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দিতে শোনা যায়।এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারকে উচ্চপ্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় গত বুধবার এজলাসে ডাকা হয়েছিল। হাইকোর্টের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ভূগোলে নিয়োগ না পেয়ে আদালত অবমাননার মামলা হয়।
আরও পড়ুন: দিঘায় জগন্নাথদেবের নিকট কী কী ভোগ নিবেদন করা হয়েছিল? ৫৬ ভোগের তালিকায় ছিল এই পদগুলি
এসএসসি তরফে জানানো হয়, ভূগোল বিষয়ে ওবিসি মেল সিট ছিল না, তাই চাকরি পায়নি চাকরিপ্রার্থী। এমন উত্তর কানে আসতেই বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘এই ভুল এসএসসির। সম্পূর্ণ দায় এসএসসির। এমনকি এজলাস থেকে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানোর হুশিয়ারিও শোনা যায় তার গলায়। অন্যদিকে বিচারপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের তরফে জানানো হয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া যখন শুরু হয় তখন দুটো ভাগে শূন্যপদ ঠিক করা হয়ে থাকে।
একটি হল ঘোষিত শূন্যপদ এবং অপরটি হল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সম্ভাব্য শূন্যপদ। তাহলে এখন কেন এসএসসি জবাব দিচ্ছে ভুগোলে শূন্যপদ না থাকার! সুপ্রিম কোর্টের তরফে সম্মতি দেওয়া হয় উচ্চপ্রাথমিক নিয়োগ মামলা হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশকে। তা সত্ত্বেও হাইকোর্টের নির্দেশ মতো যোগ্য হয়েও চাকরি দেওয়া হয়নি একজনকে। যোগ্যতার ভিত্তিতে ওই ব্যক্তির কথা ছিল ভূগোলে ওবিসি মেল শূন্যপদে চাকরি পাওয়ার। আর সেই মামলার শুনানিতেই সমালোচনার মুখে পড়লো এসএসসি।
হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানানো হয়েছে, এই সময় এসএসসি যদি এই ওই সমস্যা দেখিয়ে এড়িয়ে যায় সেটা কোন কারণে মানবে আদালত। গঙ্গা দিয়ে কম জল গড়ায়নি। তাই এসএসসি এখন চাকরি না দেওয়ার এমন অজুহাত খাড়া করতে পারে না। বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর তরফে স্পষ্ট জানানো হয়, ”এই সমস্যার সমাধান এসএসসি চেয়ারম্যান না বের করলে আদালত তা মানবে না। ভূগোলের আসন নিয়ে এসএসসি রাজ্য সরকার নাকি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবে, সেটা তাদের ব্যাপার। এসএসসি কীসের জন্য রয়েছে? এমন সমস্যার সৃষ্টি যাতে না হয় তা দেখার জন্য নিশ্চয়ই। এখন যেহেতু এসএসসির জন্য সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তাই সমাধান করতে হবে এসএসসিকেই।
আদালতের নির্দেশ মেনে উচ্চপ্রাথমিকের নিয়োগ তালিকার প্রতিটি যোগ্য প্রার্থীকে চাকরি দিতে হবে। এটাই শেষ সুযোগ আদালতের তরফে। এরপরেও যদি চাকরি না পান তারা তবে হাইকোর্ট কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে ৷” বিচারপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ”এসএসসি এর তরফে কাউন্সেলিং করা হয় স্কুল বাছাইয়ের জন্য। তাহলে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির শূন্যপদ না থাকার কারণ কী! রাজ্য সরকারের তরফে অনুমতি মিললে আমরা করে দেব৷ বা আদালতের কাছে আদেশ প্রার্থনা করার কারণ কী! ভূগোলে ৪৪ শূন্যপদের ৩৬ নিয়োগ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আর যা বাকি নিয়োগ রয়েছে তার ক্ষেত্রে এসএসসি সমস্যায় পড়লে সমাধান তাদের বের করার দায়িত্ব।”