India US Relation: মার্কিন চাপ অগ্রাহ্য করে রাশিয়ার সস্তা তেলে বাজিমাত নয়াদিল্লির

India US Relation: চলমান নয়াদিল্লি ওয়াশিংটন সম্পর্কে এবার নতুন মাত্রা যোগ হলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়েও নয়াদিল্লিকে নড়াতে পারলেন না। বরং রাশিয়ার সস্তা তেল কিনে তা প্রক্রিয়াজাত করে বিশ্ববাজারে বিক্রি করে ভারতের তেল কোম্পানিগুলি বিপুল লাভ করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি এক প্রকার কূটনৈতিক ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

মার্কিন চাপ ও শুল্কনীতি

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে না পেরে আমেরিকা ক্রেমলিনের অর্থনীতি দুর্বল করার পথে হাঁটছে। সেই প্রক্রিয়ায় ভারতকে চাপে রাখতে আমদানিতে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০%। উদ্দেশ্য, ভারত যেন রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে। কিন্তু বাস্তব বলছে, এই চাপ কোনও কাজে আসেনি। বরং নয়াদিল্লি ওয়াশিংটন সম্পর্ক (India US Relation) এখন আরও টানাপোড়েনের মুখে।

ভারতের পাল্টা কৌশল

রাশিয়া থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল আমদানি করছে ভারত। দেশীয় কোম্পানিগুলি তা রিফাইন করে বিশ্ববাজারে বিক্রি করছে। শুধু আগস্ট মাসেই ডিজেল রপ্তানি বেড়েছে ১৩৭%। প্রতিদিন গড়ে ২,৪২,০০০ ব্যারেল ডিজেল বিদেশে রপ্তানি করছে ভারত। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটছে।

ইউরোপে রপ্তানির সাফল্য

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়েছে ভারত। অগাস্টে ইউরোপে রপ্তানি ৭৩% বৃদ্ধি। সংস্থা কেপলার জানিয়েছে, বার্ষিক ভিত্তিতে রপ্তানি বেড়েছে ১২৪%। ভর্টেক্সা জানাচ্ছে, অগাস্টে প্রতিদিন ২,২৮,৩১৬ ব্যারেল ডিজেল ইউরোপে গেছে, বার্ষিক ভিত্তিতে ১৬৬% বৃদ্ধি। স্পষ্টতই, ইউরোপীয় বাজারে ভারত দ্রুত নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহকারী হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মত

শীতকালীন চাহিদা, স্থানীয় রিফাইনারিগুলির রক্ষণাবেক্ষণ এবং ইউরোপীয় বিধিনিষেধের কারণে ভারতের ডিজেলের চাহিদা বেড়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫ জুড়েই ডিজেলের আন্তর্জাতিক চাহিদা উচ্চ থাকবে। ভারত এর সুবিধা নিতে সক্ষম হচ্ছে মূলত রাশিয়ার সস্তা তেলের কারণে। একজন জ্বালানি বিশ্লেষকের ভাষায়, ভারতের কৌশল কেবল অর্থনৈতিক সুবিধা নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব বিস্তারেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

আরও পড়ুন: জিএসটি সংস্কারে বড় রদবদল, কী পেল ছাড়পত্র, কার বাড়ল দাম?

মার্কিন অভিযোগ ও ভারতের জবাব

ওয়াশিংটনের অভিযোগ, ভারত রাশিয়ার সস্তা তেল কিনে তা প্রক্রিয়াজাত করে পশ্চিমি দেশগুলিকেই বিক্রি করছে। এর ফলে মস্কো আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে, যা ইউক্রেন যুদ্ধের বিরোধী পশ্চিমি অবস্থানকে দুর্বল করছে। এ বিষয়ে নয়াদিল্লির জবাব, যদি পশ্চিমি দেশগুলির আপত্তি থাকে, তবে তারা ভারতের কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে পারে।

আমেরিকার শুল্ক চাপ উপেক্ষা

সব মিলিয়ে স্পষ্ট, ভারত আমেরিকার শুল্ক চাপকে উপেক্ষা করে রাশিয়ার সস্তা তেলের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। একদিকে মার্কিন সম্পর্ক জটিল হচ্ছে, অন্যদিকে নয়াদিল্লি বিশ্ববাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে। তাই ভারত আমেরিকা সম্পর্কে (India US Relation) এখন শুধু কূটনৈতিক টানাপোড়েন নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির বড় ইস্যুতেও পরিণত হয়েছে।