রীতি মেনে বোধন দিয়ে আজ থেকে বালিজুড়ির দুই পরিবারের দুর্গাপূজা শুরু

লাল্টু : বাঙালির প্রাণের পুজো দুর্গোৎসব আসতে বেশ কয়েকটা দিন দেরি থাকলেও বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের বালিজুড়ি গ্রামের চট্টোপাধ্যায় এবং রায় পরিবারের দুর্গাপূজো আজ থেকেই শুরু হয়ে গেল। কয়েকশো বছরের প্রাচীন রীতি অনুসারে পূজো শুরু কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে, যা দুর্গাপুজোর মহানবমীর ঠিক একপক্ষ কাল আগে।

আজ সোমবার কৃষ্ণপক্ষের নবমীর শুভ তিথিতে রীতি মেনে এই দুই পরিবার যমুনা সায়র থেকে সকালবেলায় বাদ্যযন্ত্র সহকারে ঘটা করে মঙ্গলঘট নিয়ে এসে মা দুর্গার পুজো শুরু করে দিলেন। এ দৃশ্য ঠিক মহাসপ্তমীর সকালের মত, যেদিন অন্যান্য দুর্গা পুজোর নবপত্রিকা স্নানের জন্য শোভাযাত্রা করা হয়।

কিন্তু কেন এক পক্ষকাল আগে এই দুই পরিবারের দুর্গা পুজো শুরুর রীতি। সে বিষয়ে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজোর দায়িত্বে থাকা কমিটির সভাপতি বিমান মুখোপাধ্যায় জানান, “এই পুজো আরম্ভ করেছিলেন তেকুরাম চট্টোপাধ্যায় মহাশয়। সময়টা ১১১১ বঙ্গাব্দ। তিনি রাজনগরের নবাবের দেওয়ান ছিলেন। কিন্তু তিনি পরে এই পুজোর খরচা বহন করতে পারছিলেন না। সেই কথাটাই নবাব আলিনকি খানের কানে যায়। তখন নবাব এই পুজোয় চালানোর জন্য ৬৪ বিঘা জমি, ৭টি পুকুর এবং একটি বড় পুস্করনী দান করেন। তারপর থেকেই রীতি মেনে কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে দুর্গা মায়ের বোধনের মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো। এই পুজোতে বর্তমানে অনেক শরিক ঢুকলেও একই রীতি মেনে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে এই পূজো চলে আসছে।”

অন্যদিকে রায় পরিবারের পুজোর উৎস সম্পর্কে পুলক রায় জানান, “বালিজুড়ি গ্রামের সবথেকে প্রাচীন পুজো হলো এই রায় পরিবারের পুজো। আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশ বছর আগে এক কাপালিকের নির্দেশে মানিক চন্দ্র রায় এই পুজো শুরু করেছিলেন। তারপর থেকেই রীতি মেনে কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে যমুনা সায়র থেকে ঘটা করে চট্টোপাধ্যায় এবং রায় এই দুই পরিবারের দেবী মায়ের মঙ্গলঘট আনা হয়। এরপর আজ থেকেই দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয় আগামী বিজয়া দশমী পর্যন্ত। তারপর আর পাঁচটা দুর্গা পুজোর মত বিজয়া দশমীতে মা দুর্গাকে কৈলাসের পথে রওনা করানো হয়।”

মহা নবমীর একপক্ষ কাল আগে কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে শুরু হওয়া বালিজুড়ি গ্রামের এই দুই পরিবারের দুর্গাপুজো ঘিরে ওই পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও সাধারণ মানুষদের মধ্যেও দেখা যায় আলাদা উৎসাহ উদ্দীপনা। আজ থেকেই প্রসাদ বিতরণ এবং ভোগের আয়োজন থাকে। বিভিন্ন পাড়ার মানুষেরা এই ভোগ নেওয়ার জন্য নিমন্ত্রিত থাকেন।

এই পূজো বর্তমানে ১১ পুরুষ ধরে চললেও রীতিনীতিতে কোনরকম নড়চড় হয়নি। বরং দিনের পর দিন এই পূজাকে ঘিরে বাড়ছে আরও উৎসাহ উদ্দীপনা।