মাত্র এক মাস আগেও অনেক ভারতীয় পর্যটক গন্তব্য হিসেবে তুরস্ককে প্রাধান্য দিতেন। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার পর ভারত যখন ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়, তখন তুরস্ক ও আজারবাইজান পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের বিরোধিতা করে। এমনকি পাকিস্তান ভারতকে আক্রমণ করতে তুরস্কের ড্রোন ব্যবহার করে। এর ফলে ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে, যার প্রভাব পড়ছে দুই দেশের পর্যটন ব্যবসায়।
প্রতিবছর ভারতীয় পর্যটকরা তুরস্ক ও আজারবাইজানে ভ্রমণ করে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেন। কিন্তু এখন সেই পর্যটকদের বড় একটি অংশ ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করছেন। মলদ্বীপের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছিল, যখন ভারত বিরূপ মনোভাব দেখালে তাদের পর্যটন খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে #BoycottTurkey এবং #BoycottAzerbaijan ট্রেন্ড করছে। বিশিষ্ট শিল্পপতি হর্ষ গোয়েনকা সম্প্রতি X-এ একটি পোস্টে জানান, “ভারতীয়রা প্রতি বছর প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা খরচ করেন এই দুই দেশে। এতে বহু চাকরি তৈরি হয়, হোটেল, এয়ারলাইনস, বিয়ের ভেন্যু ইত্যাদি লাভবান হয়। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার পরে ওদের অবস্থান আমাদের পক্ষে ছিল না। ভারত ও বিশ্বের আরও অনেক সুন্দর জায়গা আছে এই দুটি এড়িয়ে চলুন। জয় হিন্দ!”
পর্যটন সংস্থা MakeMyTrip-এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে তুরস্ক ও আজারবাইজানে বুকিং ৬০ শতাংশ কমেছে, আর বাতিল হয়েছে ২৫০ শতাংশ বেশি। সংস্থাটি এই দুই দেশের প্রমোশনাল কনটেন্ট বন্ধ রেখেছে। EaseMyTrip জানিয়েছে, তুরস্কের ২২% এবং আজারবাইজানের ৩০% টিকিট বাতিল হয়েছে এবং সকল ফ্লাইট ও হোটেল বুকিং স্থগিত করা হয়েছে।
EaseMyTrip-এর CEO জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে তুরস্কে ২.৭৪ লক্ষ ও আজারবাইজানে ২.৪৩ লক্ষ ভারতীয় পর্যটক ভ্রমণ করেন। এর ফলে ভারত ছিল ওই দুই দেশের পর্যটন খাতের অন্যতম বড় উৎস। Ixigo সংস্থাও এই তিন দেশ তুরস্ক, আজারবাইজান ও চীনের জন্য বুকিং বন্ধ রেখেছে।
একজন ভ্রমণ সংস্থার পরিচালক জানিয়েছেন, মে থেকে জুলাই পর্যন্ত ২০০টিরও বেশি তুরস্কগামী ট্যুর বুকিং ছিল, যার ৮০% ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, “যে দেশ আমাদের পাশে দাঁড়ায় না, তাদের আমরা আর প্রমোট করব না। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, এটা আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।”
আজারবাইজানে যুগল প্যাকেজের খরচ প্রায় ২ লক্ষ টাকা, ফ্লাইট বাদে। প্রতি ভারতীয় পর্যটক প্রায় ১.১০ লক্ষ টাকা খরচ করেন। ২০২৪ সালে ২.৪৩ লক্ষ ভারতীয় সেখানে ঘুরতে যান, অর্থাৎ আনুমানিক আয় প্রায় ২,৬৮০ কোটি টাকা। তুরস্কেও একই রকম খরচ করে পর্যটকরা, আর তাদের সংখ্যা ছিল ৩.৩০ লক্ষ ফলে আয় প্রায় ৪৩০০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয় ফ্লাইট, ভিসা ইত্যাদির ব্যয়।