Indian Football Vision 2047: ভারতে ফুটবল নিয়ে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবের “ভিশন ২০৪৭” রোডম্যাপের মাধ্যমে। ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে ভারতীয় ফুটবলকে শুধু দেশীয় সীমানায় সীমাবদ্ধ না রেখে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে হবে। তার ঘোষিত এই রোডম্যাপ মূলত ২৫ বছরের দীর্ঘ পরিকল্পনা, যেখানে ধাপে ধাপে ভারতীয় ফুটবলের প্রতিটি স্তরে পরিবর্তন আনার রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে।
ভিশন ২০৪৭ (Indian Football Vision 2047) এর মূল লক্ষ্য
কল্যাণ চৌবের পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে ২০৪৭ সাল—ভারতের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি। সেই বছরকে সামনে রেখেই AIFF-এর লক্ষ্য, ভারত যেন এশিয়ার অন্যতম সেরা ফুটবল শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বিশ্বকাপে নিয়মিত অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করে। এই রোডম্যাপের মূল লক্ষ্য চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে—
- যুব প্রতিভা গড়ে তোলা ও ঘাসরুট উন্নয়ন
- লিগ কাঠামোর সংস্কার ও বিস্তার
- আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো তৈরি
- মহিলা ফুটবলের উন্নয়ন ও সমান গুরুত্ব
যুব ফুটবল ও তৃণমূল স্তরে উন্নয়ন
চৌবে বারবার জোর দিয়েছেন, “শুধু সিনিয়র দলে কিছু নামী খেলোয়াড় এনে লাভ নেই, মূল কাজ শুরু করতে হবে শৈশব থেকে।” সেই কারণেই ভিশন ২০৪৭ (Indian Football Vision 2047)-এর আওতায় প্রতিটি রাজ্যে AIFF অনুমোদিত একাডেমি ও ফুটবল স্কুল চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ৬–১২ বছর বয়স থেকেই খেলোয়াড়দের পেশাদার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এছাড়া, স্কুল ফুটবল ও বিশ্ববিদ্যালয় লিগ পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে কমপক্ষে এক মিলিয়ন নিবন্ধিত তরুণ খেলোয়াড়কে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে নিয়ে আসা।
লিগ কাঠামোতে সংস্কার
বর্তমানে ভারতের ফুটবলে আইএসএল (ISL) সবচেয়ে জনপ্রিয় লিগ হলেও এর বাইরেও একটি সম্পূর্ণ পিরামিড কাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। ভিশন ২০৪৭ (Indian Football Vision 2047) অনুযায়ী—
- শীর্ষ স্তরে থাকবে ISL (Tier-1)
- দ্বিতীয় স্তরে থাকবে I-League (Tier-2)
- তৃতীয় স্তরে I-League 2
- এবং চতুর্থ ও পঞ্চম স্তরে আঞ্চলিক ও জেলা লিগ
এই ধাপভিত্তিক কাঠামোর মাধ্যমে একটি গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত ফুটবলারের জন্য পেশাদার লিগে ওঠার সিঁড়ি তৈরি করা হবে।
আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো
ভারতের ফুটবল অবকাঠামো এখনও সীমিত। কল্যাণ চৌবে ঘোষণা করেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ৫০টি ফিফা স্ট্যান্ডার্ড স্টেডিয়াম নির্মাণ বা সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি, প্রত্যেক রাজ্যে ন্যূনতম একটি করে সেন্টার অব এক্সেলেন্স তৈরি করা হবে, যেখানে খেলোয়াড়রা প্রশিক্ষণ, স্পোর্টস সায়েন্স, ফিটনেস ও মেডিকেল সাপোর্ট পাবেন।
মহিলা ফুটবলে বিশেষ জোর
ভিশন ২০৪৭ (Indian Football Vision 2047)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মহিলা ফুটবলকে পুরুষদের সমান গুরুত্ব দেওয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মহিলা আইএসএল শুরু করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এছাড়াও, U-17 ও U-20 স্তরে নিয়মিত প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং মহিলা কোচ তৈরির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্য, ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতীয় মহিলা দল যেন নিয়মিত এশিয়ান কাপে খেলতে পারে এবং বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও লক্ষ্য
চৌবে স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভারতকে কেবলমাত্র ঘরোয়া ফুটবল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা যাবে না। ২০৩১ সালের এশিয়ান কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছানো এবং ২০৩৬ সালের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করা এই রোডম্যাপের বড় দুটি মাইলস্টোন। এর জন্য বিদেশি কোচ, প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ, এবং প্রবাসী ভারতীয় খেলোয়াড়দের (OCI প্লেয়ার) অন্তর্ভুক্তির ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
যদিও পরিকল্পনাটি অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী, বাস্তবে তা কার্যকর করা সহজ নয়। অর্থায়ন, ফেডারেশন ও ক্লাবগুলির মধ্যে সমন্বয়, এবং খেলোয়াড়দের ধারাবাহিক উন্নয়ন—এসবই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কল্যাণ চৌবের মতে, “দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা না করলে ভারতীয় ফুটবল শুধু টুর্নামেন্ট খেলে যাবে, বিশ্বমানের সাফল্য পাবে না।”
ঐতিহাসিক রোডম্যাপ
কল্যাণ চৌবের “ভিশন ২০৪৭” (Indian Football Vision 2047) আসলে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ রূপান্তরের এক মহাযাত্রা। যদি সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তবে আগামী ২০ বছরের মধ্যে ভারত শুধু এশিয়ার নয়, বিশ্ব ফুটবলেও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। ভিশন ২০৪৭ তাই শুধু একটি কাগুজে পরিকল্পনা নয়, বরং কোটি কোটি ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার এক ঐতিহাসিক রোডম্যাপ।