ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বে বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বাংলা তথা ভারত বর্ষ। দেশ এবং রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী বীরভূমেরও বিভিন্ন জায়গা। সেই রকমই একটি জায়গা হল নীলকুঠি। দাদন দিয়ে নীল চাষ, কৃষকদের উপর অত্যাচার ইত্যাদির সাক্ষী থেকেছে বীরভূমের এই নীলকুঠি। ইতিহাসকে জীবিত করে রাখা জঙ্গলে ঘেরা ওই নীলকুঠিটি হল বীরভূমের লাভপুরের গুণুটিয়া।
বোলপুর ও লাভপুরের রাস্তায় কুয়ে নদী পার হওয়ার পর লাভপুর থেকে লাঘাটা যাওয়ার পথে সেতু পার হয়েই ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে জঙ্গলে ঘেরা এই জায়গা। যেখানে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের আড়াইশো বছরেরও বেশি প্রাচীন ইটের নির্মাণ। রয়েছে একটি মিনার। তবে এ সকল সবই এখন ভগ্নপ্রায়। ভগ্নপ্রায় হলেও এই সকল নির্মাণ, মিনার এখনো ব্রিটিশদের নীল চাষের সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১৭৭৫ সালে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড হে ময়ূরাক্ষী নদী ও অজয় নদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এবং সুবিধার জন্য এই জায়গায় নীলকুঠি নির্মাণ করেছিলেন।
তবে এলাকার সাহিত্য অনুরাগী মানুষদের থেকে জানা যায়, গুনুটিয়ার নীলকুঠি আসলে রেশম কুঠি। কেননা সেখানে প্রথমদিকে রেশন চাষ হতো। আবার অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, প্রথমদিকে সেখানে রেশম, তুঁত চাষ হলেও পরবর্তীতে নীল চাষ করা হতো। গুনুটিয়ার এই নীলকুঠি ১৭৮৫ সালে ২০ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছিলেন ফরাসি বণিক জেমস ফ্রুশার্ড। ১৮০৮ সালে এই কুঠি চলে যায় ব্রিটিশদের হাতে।
আরও পড়ুন: Pan Card Loan: প্যান কার্ড থেকে লোন পেয়ে যান ৫০ হাজার টাকা
গুনুটিয়ার নীলকুঠিকে ঘিরে সাধারণ মানুষদের বহু আশা আকাঙ্ক্ষা লুকিয়ে রয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা চান এখানে একটি পার্ক তৈরি করা হোক। এখানে পার্ক তৈরি করা হলে এলাকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামোই ব্যাপক বদল আসবে। কেননা এমনিতেই এখানকার এই নীলকুঠির নাম বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে রয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজনেরা ঘুরতে আসেন।
যদিও এই এলাকা বীরভূমের একটি বড় ইতিহাস বহন করে থাকলেও তা এখন ব্যক্তিগত মালিকানায় রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যক্তিগত মালিকানাকে পর্যটন কেন্দ্রের পরিণত করার ক্ষেত্রে নানান সমস্যা রয়েছে। এলাকার সাহিত্য অনুরাগীরা এই বিষয়ে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ওই ব্যক্তিগত মালিকানাধীনদের সঙ্গে কথা বলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।