আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধরে রাখতে কেন এত মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদন : একদিকে কেন্দ্র অন্যদিকে রাজ্য, দুই পক্ষই আইএএস আধিকারিক আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজেদের ঘাড়ে টানতে শুরু করে টানাপোড়েন। একের পর এক পত্রযুদ্ধ শেষে যদিও জয় ছিনিয়ে নেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তো আর জয় আসে অন্য পথে।

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ৩১ মে নিজের কর্মজীবনের মেয়াদ বৃদ্ধি না করে অবসর নেন এবং তার অবসর গ্রহণের সাথে সাথেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে ধরে রাখলেন নিজের মুখে উপদেষ্টা পদে বসিয়ে। এর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রতি মাসে আড়াই লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য সমস্ত রকম সুবিধা দেওয়া হবে। কাজ হিসাবে পরামর্শ এবং পরে আরও বিষয় ভাগ করা হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন এই আইএএস অধিকারীকে নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে এত টানাপোড়েন? কেন্দ্র কি কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লি ডেকে পাঠিয়েছিল? প্রশ্ন এটাও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি কেবলমাত্র কেন্দ্রকে জবাব দেওয়ার জন্যই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়লেন না? নাকি এসবের পিছনে রয়েছে অন্য কোনো কারণ?

১৯৮৭ সালের এই আইএএস আধিকারিক আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝাঁ-চকচকে শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি তার কর্মজীবনের রয়েছে বিপুল অভিজ্ঞতা। শিক্ষা জীবন থেকে কর্মজীবন সব ক্ষেত্রেই তিনি যেন দাগ কেটে রয়েছেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি সাংবাদিকতা করলেও পরে আইএএস আধিকারিক হওয়ার পর হাওড়া, দুই ২৪ পরগনার জেলাশাসক ছিলেন। পরে কলকাতা পুরসভার কমিশনারের দায়িত্বও সামলেছেন। বাম আমলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের খুব কাছের লোক হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মূলত তার বুদ্ধিমত্তার উপরেই ভরসা রাখতেন।

এরপর ২০১১ সালে পালাবদল হলেও ক্রমাগত তিনি নতুন সরকারের বিশ্বাসভাজন হয়ে পড়েন। ২০১৫ সালে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ হন। পরে পরিবহণ, ক্ষুদ্র, কুটির এবং মাঝারি শিল্প, তথ্য ও সংস্কৃতি, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব হন। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং মুখ্য সচিব। জানা গিয়েছে, রাজ্যের তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ সামলানোর ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবথেকে ভরসার আইএএস আধিকারিক হন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।

এমনকি তিনি দক্ষতার সাথে সামলেছেন কোভিড পরিস্থিতির মাঝেই আমফান থেকে ঘূর্ণিঝড় যশ। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর থেকে প্রশাসনিক বৈঠক সবক্ষেত্রেই ছায়াসঙ্গী এই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কেউ কেউ আবার মনে করেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরদারিতে ভোটের আগে বিপুল সফলতা লাভ করেছে দুয়ারে সরকার।

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুলভাবে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা, বিচক্ষণতার সাথে নির্দেশ পালনের অভ্যেস স্বাভাবিকভাবেই মুগ্ধ করেছে রাজ্য প্রশাসনকে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আম্ফান মোকাবিলার অভিজ্ঞতাকে নজরে রেখে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে দীঘা পুনর্গঠনের দায়িত্ব সঁপে দিয়েছেন। আর এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই তৃতীয়বার সরকারে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনোভাবেই এমন অভিজ্ঞ, কর্মঠ আমলাকে হাতছাড়া করতে চাননি।