দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কান্টার ও নিয়েলসনের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, শহর ও গ্রাম দুই ক্ষেত্রেই বিক্রির গতি মন্থর। সাবান, শ্যাম্পু, তেল, বিস্কুটের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজারে চাহিদা এখনও প্রত্যাশিত উচ্চতায় পৌঁছায়নি। কান্টারের বিশ্লেষণ বলছে, ২০২৩ সালে যেখানে শহরাঞ্চলে ভোগ্যপণ্যের বৃদ্ধি ছিল ৪.৬%, সেখানে ২০২৪ এর জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তা নেমে এসেছে ৪.৩% এ। গ্রামাঞ্চলেও পতন প্রকট ৬.৫% থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২.৭% এ।
মূল সমস্যা দুই ক্ষেত্রেই অভিন্ন।মূল্যবৃদ্ধির চাপে আয়-ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ পরিবার। অধিকাংশের আয় অপরিবর্তিত থাকায় বাধ্য হয়েই দৈনন্দিন কেনাকাটায় রাশ টানছেন ক্রেতারা। হিন্দুস্থান ইউনিলিভারের এমডি রোহিত জাওয়া জানিয়েছেন, “গত এক বছরে শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামীণ বাজার তুলনামূলকভাবে ভালো পারফর্ম করেছে। উত্তর, মধ্য এবং পূর্ব ভারতের গ্রামাঞ্চলে বিক্রির গতি খানিকটা টিকে রয়েছে। স্বাভাবিক বর্ষা হলে বাজারে গতি ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে।”
আরও পড়ুন: সিউড়ি থেকে সোজা দিঘা, রাজনগর থেকে কলকাতা! চালু হল দুটি বাস! দেখে নিন সময়সূচি ও ভাড়া
গোদরেজ কনজ়িউমারসের সিইও সুধীর সীতাপতিও একই সুরে জানিয়েছেন, “দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৬% থাকলেও ভোগ্যপণ্যের বৃদ্ধি আটকে রয়েছে মাত্র ৪ শতাংশে। চাহিদার স্থবিরতাই মূল বাধা। পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে ১২-১৮ মাস।” চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে ভোগ্যপণ্য ক্ষেত্রের মোট বৃদ্ধি ৩.৫%, যা গত তিন বছরে সর্বনিম্ন। এক বছর আগে, এই সময়েই বৃদ্ধি ছিল প্রায় ৫.৫%।
নিয়েলসন জানাচ্ছে, গ্রামাঞ্চলে বিক্রির বৃদ্ধির হার ৯.২% থেকে কমে হয়েছে ৮.৪%, আর শহরে ৪.২% থেকে নেমে এসেছে ২.৬%-এ। হিন্দুস্থান ইউনিলিভারের সিএফও রীতেশ তিওয়ারি সতর্ক করে দিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বিক্রির গতিপথ নির্ধারণ করবে ভোগ্যপণ্য বাজারের ভবিষ্যৎ। ম্যারিকোর এমডি সৌগত গুপ্তের মতে, “খরচ বাড়লেও অধিকাংশ চাকরিজীবীর আয় অপরিবর্তিত রয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে শহুরে চাহিদায়।”
নিয়েলসনের তথ্যে আরও উঠে এসেছে, অর্থের ঘাটতিতে ক্রেতারা বড় প্যাকেটের বদলে ছোট আকারের প্যাকেট বেশি কিনছেন। টাকার হিসাবে বিক্রির গতি কমলেও ইউনিট সংখ্যা বেড়েছে, যা হাতে পুঁজি কম থাকারই ইঙ্গিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাতে নগদ প্রবাহ বাড়ানো এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া ভোগ্যপণ্য খাতে সুদিন ফেরানো কঠিন। আর সে কাজ সহজ হবে না বলছে বাজারের সাম্প্রতিক ধারা।