লাল্টু: ‘স্কুলে না গেলে তুলে নিয়ে চলে যাব!’ ঠিক এই ভাবেই প্রধান শিক্ষককে স্কুলছুট ছাত্রের বাড়ি গিয়ে হুঁশিয়ার দিকে দেখা গেল। যদিও এমন ঘটনাকে হুঁশিয়ারি বলা যায় না, কেননা, ওই প্রধান শিক্ষক এমনটা বলতে পেরেছেন কেবলমাত্র ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি তার ভালোবাসা থেকেই। প্রধান শিক্ষকের এমন হুঁশিয়ারি এতটাই ভালোবাসায় ভরা ছিল যে ওই ছাত্র তো হেসে ফেলেন, পাশাপাশি আশেপাশে যারা ছিলেন তারাও হেসে গড়াগড়ি দেন।
কন্যাশ্রী থেকে সাইকেল! এত কিছুর পরেও কেন স্কুলে আসছে না পড়ুয়ার! অবশ্য সবাই নয়, তবে দিন দিন স্কুল ড্রপ আউট অর্থাৎ স্কুল ছুট পড়ুয়াদের সংখ্যা বিভিন্ন জায়গায় বাড়তে দেখা যাচ্ছে। স্কুল ছুট পড়ুয়াদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছেও চিন্তার কারণ। স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় নতুন করে যুদ্ধক্ষেত্রে নামতে দেখা গেল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি স্কুল ছুট পড়ুয়াদের সংখ্যা কমানোর জন্য বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের মেটেলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নতুন ভূমিকায় দেখা গেল। তারা তাদের বিদ্যালয়ের স্কুল ছুট পড়ুয়াদের সংখ্যা দেখে কারণ জানতে চেয়ে এবার ঐ সকল পড়ুয়াদের বাড়ি যাওয়া শুরু করলেন। ইতিমধ্যেই ওই স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা স্কুল সংলগ্ন পাকুরিয়া, বনহরি, খয়ের বন সহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ওই সকল পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন। আর এই কথা বলা যে কতটা সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে তা জানিয়েছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কল্যাণ দে।
অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাক এমনটা চান না খুন কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিকভাবে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক কি কি সমস্যা রয়েছে তা জানতে চান। আর এই সকল কথাবার্তার মধ্যেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অভিভাবকদের প্রতিশ্রুতি দেন, স্কুলের যে ন্যূনতম ফি রয়েছে তাও যদি প্রদানের ক্ষেত্রে কোন রকম সমস্যা হয় সেটাও মুকুব করে দেওয়া হবে। কিন্তু পড়ুয়াদের স্কুল আসতে হবে। এছাড়াও পড়ুয়াদের প্রতি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কতটা ভালোবাসা তা ধরা পড়ে একটি কথাতেই। তা হল তিনি এক ছাত্রকে বলেন, ‘কালকে যেন ড্রেস পরে স্কুলে দেখি। এই দেখ দিদিমণি এসেছে মাস্টারমশাইরা এসেছে। আর যদি না যাস তাহলে আমি এসে তুলে নিয়ে যাব।’