কৃষকরা এই সকল প্রকল্পে এইভাবে আবেদন করে পেতে পারেন সরকারি সুবিধা

নিজস্ব প্রতিবেদন : যাদের দিনরাত কঠোর পরিশ্রমে আমাদের পেটে অন্ন জুটছে সেই সকল কৃষকরা হলেন দেশের সম্পদ। তবে সিস্টেমের আদলে পরে এই সকল কৃষকরা দিনরাত এক করে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলেও তাদের অবস্থার পরিবর্তন সেভাবে নজরে আসে না। বর্তমান যুগেও তারা সেই গাঁয়ের চাষী হয়েই রয়েছেন।

তবে এই সকল চাষীদের অবস্থার উন্নতির জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারই সম্প্রতিকালে একাধিক প্রকল্প নিয়ে এসেছে তাদের সুযোগ সুবিধার জন্য। এই সকল প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম হলো প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মাননিধি যোজনা, কৃষক বন্ধু প্রকল্প, আতমা, রাজ‌্য দুর্যোগ মোকাবিলা ফান্ড। এই প্রকল্প গুলিতে কিভাবে আবেদন করে সরকারি সুবিধা পাওয়া যায় তা দেখে নেওয়া যাক।

প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মাননিধি যোজনা : সম্প্রতি কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গের চাষিরা। এই প্রকল্পের প্রথম কিস্তি ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের কয়েক লক্ষ কৃষক পেয়েছেন। আগামী দিনে এই প্রকল্প রাজ্যের প্রতিটি কৃষক যাতে পেতে পারেন তার জন্য চলছে সরকারি উদ্যোগ এবং আবেদন গ্রহণ।

এই প্রকল্পের আওতায় একজন কৃষকের জমির পর্চা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকলেই তিনি তিন কিস্তিতে বছরে মোট ৬ হাজার টাকা কেন্দ্র সরকারের থেকে পেতে পারেন। এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য এক শতক বা তার বেশি জমি থাকতে হবে। পরিবারের একজন সদস্য এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

তবে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন না এমএলএ, এমপি, চেয়ারম্যান, সভাপতি সহ এই বর্গের মানুষেরা। এছাড়াও যাদের সরকারি চাকরি রয়েছে অথবা মাসিক পেনশন ১০,০০০ টাকার বেশি তারাও আবেদন করতে পারবেন না। পাশাপাশি ওয়ারিশন সূত্রে পাওয়া জমি দেখিয়ে আবেদন করা যাবে না।

আবেদন করার পদ্ধতি হল অনলাইন। আবেদন করার জন্য আবেদনকারীকে https://pmkisan.gov.in/ ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় নথি, ব্যাঙ্ক অ‌্যাকাউন্ট, জমির পর্চা ইত্যাদি দিয়ে আবেদন করলে সেই আবেদনপত্র সহ কৃষি অধিকর্তা অ্যাপ্রুভ করে দিলেই ওই আবেদনকারীর নামে এই প্রকল্প শুরু হয়ে যাবে।

কৃষক বন্ধু প্রকল্প : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যের কৃষকদের জন্য এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পে এখন দ্বিগুণ ভাতা দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। অর্থাৎ আগে যিনি ২০০০ টাকা অথবা ৫ হাজার টাকা ভাতা পেতেন এখন তিনি ৪০০০ টাকা এবং ১০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।

এই প্রকল্পের আবেদন করার জন্য আবেদনকারীর জমির পর্চা থাকতে হবে। এখন যদিও জমির দলিল দিয়েই আবেদন করা যাচ্ছে। এছাড়াও আবেদনকারীকে দিতে হবে তার ভোটার আইডি কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ‌্যাকাউন্ট নম্বর।

এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে আবেদনকারীর নিকটবর্তী অর্থাৎ তার ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তার করণ অফিসে। সেখানে গিয়ে আবেদন করলেই ওই অফিসের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মরত কর্মী সমস্ত রকম সহযোগিতা করে আপনার আবেদনে সাহায্য করবে।

আতমা (ATMA) : এই প্রকল্পের আওতায় ব্লক স্তরে কৃষিদপ্তর, উদ‌্যানপালন, প্রাণীসম্পদ, মৎস‌্য, রেশম ও কৃষি বিপণন দপ্তর একত্রিত হয়ে কাজ করে। এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী ক্ষেত্র, ফার্ম স্কুল, শিক্ষামূলক ভ্রমণ করানো হয়। পাশাপাশি ফার্মার ইন্টারেস্ট গ্রুপ তৈরি করা হয়। গোষ্ঠীগুলি অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম হয় তার জন্য সিড মানি দেওয়া হয়।

এই প্রকল্পে কাজ করার জন্য রয়েছে বিশেষ কমিটি। ব্লক স্তরের সেই কমিটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে তা পাঠায় জেলায়। জেলা স্তরে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যে এবং রাজ্য তা পাঠায় কেন্দ্রে। কেন্দ্রের অনুমোদন নিয়ে শুরু হয়ে যায় নির্দিষ্ট প্রকল্পের কাজ।

রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা ফান্ড : বন্যা, খরা, শিলাবৃষ্টি ইত‌্যাদির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের শস্যবীজ কেনার জন্য এই প্রকল্পের আওতায় চাষীদের ১০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৭৫০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য করা হয়। কোন এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে ওই এলাকার সহ কৃষি অধিকর্তা মূল্যায়ন করে তা জেলায় পাঠায় এবং জেলাশাসকের অনুমোদনক্রমে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। খরিফ শষ্যে শতকে ২৭ টাকা, রবি শষ্যে শতকে ৫৪ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে।

আবেদন করার জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম ফিলাপ করতে হয়। নথি হিসাবে জমা করতে হয় ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ‌্যাকাউন্ট, জমির পরচা।