একই নাম ও নম্বর, একসঙ্গে তিনটি ভিন্ন স্টেশনে আসে একটাই ট্রেন! কোন জাদুতে সম্ভব করলো ভারতীয় রেল?

বছর গড়াতে না গড়াতেই ভারতীয় রেল তার নিত্যনতুন অত্যাধুনিক পরিষেবা সাধারণ মানুষকে উপহার দিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না ছোট বড় রেল স্টেশন গুলিকে আধুনিকতার চাদরে মুড়ে ফেলার কাজও। তবে ভারতীয় রেল কিন্ত আবার ম্যাজিকও জানে। ভাবছেন তো কী ম্যাজিক? একই নাম, একই নম্বর। দেশের ৩ স্টেশনে একসঙ্গে আসে ‘একটাই’ ট্রেন। কি শুনে চমকে গেলেন তো? একমাত্র ভারতীয় রেল বলেই হয়তো এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে তারা। তবে আদতে এর পিছনে রেলের কোনো ছলাকলা নেই। বরং আছে রেলের বহুদিন এর নিখুঁত পরিকল্পনা, নজর কারা ব্যবস্থাপনা ও রেলের গাণিতিক খেলা।

প্রতিদিন ভারতীয় রেলের ১২ হাজারেরও বেশি ট্রেন ছুটে চলে দেশের নানা প্রান্তে। সেমি হাই স্পিড বন্দে ভারত থেকে শুরু করে বিলাসবহুল শতাব্দী, রাজধানী। আবার নিত্য যাত্রীদের জন্য ছুটে বেড়ায় এক্সপ্রেস, মেল, প্যাসেঞ্জার, আর লোকাল ট্রেন। এই বিশাল ব্যবস্থার মাঝেও কিছু ঘটনা আছে, যা অবিশ্বাস্য মনে হয়। এমনই এক ট্রেনের গল্প বলি, যার নাম ও নম্বর এক হলেও, সে একই সময়ে তিনটি ভিন্ন স্টেশনে উপস্থিত থাকে। শুনে যেন মনে হয় জাদু। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে এক অভাবনীয় বাস্তবতা।

আরও পড়ুন: গ্রাহকদের দিতে হবে ক্ষতিপূরণ! চালকদের ইচ্ছা মতো বুকিং ক্যান্সেল করার দিন প্রায় শেষ

এই দীর্ঘ যাত্রাপথের ট্রেনগুলোর জন্য একটি রেক যথেষ্ট নয়। কারণ একটি ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে যত সময় নেয়, ততক্ষণ নতুন যাত্রার জন্য আরেকটি রেক প্রস্তুত থাকতে হয়। তাই একই নাম ও নম্বরযুক্ত ট্রেনের একাধিক রেক একসঙ্গে রাস্তায় থাকে, একেকটি একেক দিনে ছাড়লেও নির্দিষ্ট এক সময়ে পৌঁছায় একেকটি স্টেশনে।

এই বাস্তবতার নিখুঁত উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, আবধ-আসাম এক্সপ্রেস (১৫৯০৯/১৫৯১০)। ডিব্রুগড় থেকে লালগড়ের দূরত্ব প্রায় ৩১০০ কিলোমিটার। যাত্রা করতে সময় লাগে চার দিনের মতো। এই দীর্ঘ পথ কভার করতে ভারতীয় রেলের প্রয়োজন হয় সাতটি আলাদা রেক। তিনটি করে দুই দিকের জন্য এবং একটি রিজার্ভ। এই সাতটি রেকই এই ট্রেনকে ‘একই সময়ে, তিন জায়গায়’ উপস্থিত থাকার সুযোগ করে দেয়।

যেমন:
এক রেক ডিব্রুগড় থেকে সকাল ১০:২০-এ ছাড়ে। আগের দিনের রেক তখন বিহারের কটিহারে (সকাল ১০:৪৫)। আর তারও একদিন আগের রেক তখন বেরেলিতে (সকাল ১০:৩৮।
এভাবেই একটিই ট্রেন, তিনটি দিনে ছেড়ে এসে, নির্দিষ্ট সময়ে তিন ভিন্ন জায়গায় থাকে। বাইরে থেকে এটি হয়তো এক অলৌকিক ঘটনা মনে হতে পারে, কিন্তু এর ভিতরে রয়েছে জটিল ক্যালকুলেশন, অভাবনীয় পরিকল্পনা এবং রেলকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম।