বাবা গাড়ি মিস্ত্রি, মেয়ে ড্যান্স ড্যান্স জুনিয়ারে কাঁপাচ্ছে বাংলা

নিজস্ব প্রতিবেদন : সামান্য গাড়ির বডি তৈরি মিস্ত্রি মেয়ে ড্যান্স ড্যান্স জুনিয়ারে বাংলা কাঁপিয়ে বীরভূমের নাম উজ্জ্বল করছে। যতটা সহজ মনে হচ্ছে এই খুদে পড়ুয়ার লড়াইটা, ততটা সহজ ছিল না। প্রথম থেকেই নানা প্রতিকূলতাকে দূরে ফেলে এসেছে এই জয়। মাত্র নয় বছর বয়সে সে আজ বীরভূমের গর্ব।

বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা তৃষা গুরুং নলহাটির কামারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। ড্যান্স ড্যান্স জুনিয়ারে সে আজ বলিউড স্টার মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে। বাবা ধনরাজ গুরুং, একজন সাধারন গাড়ির বডি তৈরি মিস্ত্রি। তিনি ক্যাসারে চলা লরির বডি তৈরি করে থাকেন। সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম, আর্থিক অনটনের মধ্যেও মেয়ের স্বপ্নপূরণে এতোটুকু খামতি নেই তাঁর। ছোট থেকেই মেয়ের নাচার ইচ্ছাকে পূরণ করার জন্য তাকে ভর্তি করেন স্থানীয় একটি নাচের স্কুলে। সেখানে সে বলিউড স্টাইলে নাচ শেখা শুরু করে। তৃষার বাবার ইচ্ছা ছিল তৃষাকে নতুন নতুন স্টাইলে নাচ শেখানোর। সেইমতো তিনি একদিন নাচের স্কুলে নিজের ইচ্ছার কথা জানান।

কিন্তু ওই নাচের স্কুলের শিক্ষক জানান, “আপনার মেয়ে হিপ হপ বা অন্য স্টাইলের নাচ করতে পারবে না।” একথা শুনে তৃষার বাবা ভেঙে পড়েননি, বরং মেয়ের নাচের উপর অগাধ বিশ্বাস রেখে ওই স্কুল ছাড়িয়ে নলহাটির শেখর মল্লিক নামে এক শিক্ষকের কাছে মেয়েকে তুলে দেন নাচ শেখানোর জন্য। পাশাপাশি তিনি নতুন ওই শিক্ষককে তার ইচ্ছার কথা জানান।

নতুন শিক্ষক শেখর মল্লিক তৃষার বাবার ইচ্ছামতো চার বছর ধরে নতুন নতুন স্টাইলের নাচ শেখাতে শুরু করে। চার বছরের প্রশিক্ষণের পর তৃষা বর্তমানে এমন একজন ড্যান্সার হিসেবে তৈরি হয় যাতে করে কোনরকম প্রতিযোগিতা থেকে যেন ঘুরে না আসতে হয়।

এরপর তারা ড্যান্স ড্যান্স জুনিয়ারে অংশগ্রহণের জন্য বহরমপুরে চলা অডিশনে পৌঁছায়। সেখানে তৃষা সফল হলে কলকাতায় পরবর্তী স্টেজের জন্য পা রাখে। আর সেখানেও সফলতাতে পৌঁছায় টিভির পর্দায়।

টিভি রাউন্ডে প্রতিযোগিতায় অংশ করে তৃষা বর্তমানে দুটি লেভেলে সফল হয়ে তৃতীয় লেভেলে পৌঁছেছে। লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আগামীদিনে একের পর এক রাউন্ডে সফলতা অর্জন করে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার।

তৃষার বাবার মেয়ের নাচের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখে জানিয়েছেন, “আমার মেয়ের সফলতা আসবেই।”

তৃষার নাচের শিক্ষক শেখর মল্লিক জানিয়েছেন, “নাচ শেখার প্রতি অদম্য ইচ্ছা তৃষাকে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। আগামী দিনের চেয়ে মস্ত বড় ড্যান্সার হবে।”

তৃষার নাচ আর তৃষার বাবার অদম্য প্রচেষ্টাকে কুর্ণিশ। হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা আজ সফলতার আঙিনায়, মাত্র ৯ বছর বয়সে হতদরিদ্র বাড়িতে জন্মেও এইভাবে সফলতা পাওয়া যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ তৃষা।